জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার পর থেকে শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক কৌশল বদলাচ্ছে। সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সে বর্তমানে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থান করছে এবং বাংলাদেশি সিম বাদ দিয়ে ভারতীয় রিলায়েন্স জিওর সিমকার্ড ব্যবহার করছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অধিকাংশ সময় ফয়সাল তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখলেও ফোনসেট পরিবর্তন না করায় আইএমই নম্বর ট্র্যাক করে তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী আলমগীর শেখ।
ভিপিএন ব্যবহার করে বিভ্রান্তি
এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে ফয়সাল মোবাইল ফোনে ভিপিএন ব্যবহার করে কখনো নিজের অবস্থান দেখিয়েছে সিঙ্গাপুরে, কখনো থাইল্যান্ডে, আবার কখনো ঢাকার পুরান এলাকায়। তদন্ত সূত্র জানায়, ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে তার অবস্থান সিঙ্গাপুরে দেখা গেলেও এক ঘণ্টার মধ্যেই তা পুরান ঢাকায় পরিবর্তিত হয়।
অর্থদাতাদের খোঁজে তদন্ত
হাদি হত্যাচেষ্টার পেছনে কারা অর্থায়ন করেছে, তা শনাক্ত করতে ফয়সালের ব্যাংক লেনদেন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তার সব ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ-কে চিঠি দিয়েছে।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ বাছির উদ্দিন বলেন, “বিএফআইইউ থেকে রিপোর্ট পেলেই অর্থের উৎস ও লেনদেনের বিস্তারিত জানা যাবে।”
অস্ত্র উদ্ধার, চার হাত ঘুরে লেকে
হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ মোট তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র নরসিংদীর একটি লেক থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হয়। পরে শ্যালকের মাধ্যমে সেটি নরসিংদীতে নেওয়া হয় এবং আলামত নষ্ট করতে লেকে ফেলে দেওয়া হয়।
র্যাব উদ্ধার করা ব্যাগে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি খেলনা পিস্তল ও ৪১ রাউন্ড গুলি পায়। এর আগে আগারগাঁও থেকেও দুটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার ১০ জন, মা–বাবার জবানবন্দি
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া তার স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, সহযোগী মো. কবিরসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মাহবুবুল আলম জানান, বর্তমানে চারজন রিমান্ডে রয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার
হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত হোন্ডা হরনেট সিরিজের মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার করেছে সিটিটিসি। তদন্তে দেখা গেছে, নম্বর প্লেট জালিয়াতির মাধ্যমে আসল নম্বরের সঙ্গে এক অঙ্ক পরিবর্তন করে ব্যবহার করা হয়েছিল, যা তদন্তে বড় ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
সীমান্ত পথে ভারতে পালানোর তথ্য
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশি তথ্যে জানা গেছে, হামলার দিন রাতেই ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। মানব পাচারকারী ও স্থানীয় একাধিক দালালের সহায়তায় তারা সীমান্তের কাঁটাতারের পাশের একটি কালভার্টের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সূত্র: যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :