পুলিশের ওপর হামলাকারীসহ গ্রেপ্তার তিন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম
পুলিশের ওপর হামলাকারীসহ গ্রেপ্তার তিন

ঢাকা: মাদক উদ্ধার অভিযানকালে আড়াল থেকে উড়ে এসে পুলিশের বুকে ছুরিকাঘাত করেছে মাদকসেবী। এ ঘটনায় মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডিএমপির তুরাগ থানায় শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, 'আব্দুর রউফ (৪০), মো. রাজু (৩২) ও ফারুক মিয়া ওরফে টুলু (৪৫)। গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছে থেকে পুলিশকে ছুরিকাঘাত করার চাকু, লোহার পাইপ ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

এদের মধ্যে হামলার মূল হোতা আব্দুর রউফ তুরাগের হাজী বিল্লাল হোসেনের ছেলে, রাজু মাগুড়া সদর উপজেলার আলোকন্দা গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে এবং ফারুক মিয়া মুন্সিগঞ্জ সদরের মুক্তারপুর গ্রামের মৃত সহিদ মোল্লার ছেলে। 

সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, 'শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতারের পর তুরাগের বিল্লাল হাজীর বাড়িতে মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনের তথ্য পায় পুলিশ। পরে কর্তব্যরত এসআই শাহিনুর রহমান সেখানে যায়। গিয়ে ৪/৫ জনকে সেখানে দেখতে পায়। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা ছাদ থেকে পালিয়ে চলে যায়।’

‘একটু পরে মাদক সেবনরত এক ব্যক্তি হঠাৎ করেই আড়াল থেকে এসে ছুড়ে দিয়ে বুকের মধ্যে এসআই শাহিনকে আঘাত করে। এতে তার পেটে ইঞ্জুরি (আহত) হয়। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।'

তিনি বলেন, 'এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ওই বাসাতে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স প্রেরণ করে বাসাটিতে কডন করে রাখা হয়। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকেই আসামী বাসায় অবস্থান করছিল এবং চারপাশে পুলিশ কডন করে রেখেছিল। এক পর্যায়ে আসামী বাসাটির ছাদে অবস্থান নেয়। ওই সময় তার হাতে একটি ছুরি ও লাঠি ছিল। আসামী পুলিশের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, পুলিশ হয় তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে, অন্যথায় সে সেখান থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবে। অথবা আব্দুর রউফের ছুরি ও লাঠি দিয়ে পুলিশকে আঘাত করবে। অস্বাভাবিক আচরণ ছিল আসামীর।'

ডিসি মোর্শেদ বলেন, 'পুলিশ সারা রাত সেখানে অবস্থান নেয়। তার স্ত্রী, ভাইদেরকে দিয়ে আসামীকে কনভেন্স করার চেষ্টা করে। কিন্তু কোন ভাবেই কনভেন্স হচ্ছিল না। সে বার বারই পুলিশকে ভয় দেখাচ্ছিল।'
 
তিনি বলেন, 'রাত সাড়ে ৪টার দিকে আসামি পুলিশের আহ্বানে আত্মসমর্পণ করে। সারা রাত ভর আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে এবং তাদের টেকনিক (কৌশল) ব্যবহার করে আট নয় ঘন্টা অবস্থান করে। সর্বশেষ ভোর সাড়ে ৪টায় মূল আসামী আব্দুর রউফকে গ্রেপ্তার করা হয়।'

এ ঘটনায় পুলিশের কর্তব্যরত কাজে বাধা ও পুলিশকে আহতের কারণে একটি মামলা হয়। পরে আসামীদেরকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান ডিসি মোর্শেদ আলম।  

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি মোর্শেদ বলেন, 'আসামীদের কাছ থেকে কিছু গাঁজা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।'

তিনি বলেন, 'আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে আগের কোন মামলা নেই। তবে তাকে ৮/৯ বার রিহাবে প্রেরণ করেছিল তার পরিবার।'

ডিসি বলেন, 'সে সেখানে মাদক সেবন করতো। ব্যবসা করতো কি না তা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।' 

তিনি বলেন, 'ঘটনাস্থলটা আব্দুর রউফের বাসার ছাদেই ছিল।সেখানে অন্যান্য মাদকসেবীরাও ছিল। যারা পালিয়ে গেছে। পরে তাদের মো. রাজু (৩২) ও ফারুক মিয়া ওরফে টুলু (৪৫) নামের দুইজনকে ধরা হয়েছে। রাজুর নামে তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।'

মোর্শেদ আলম বলেন, 'প্রতি মাসে আব্দুর রউফকে ১৭ হাজার টাকা দেয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে রউফ মাদক সেবন করতো। সে ভয়ংকর নেশাগ্রস্ত।'

উল্লেখ্য, তুরাগের ফুলবাড়িয়া বাজার সংলগ্ন ওই বাড়িতে শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাত ৮টার দিকে তুরাগ থানার এসআই শাহিনুর রহমান খানকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নিকটস্থ বেসরকারি হাসপাতালে, সেখান থেকে কুর্মিটোলা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সর্বশেষ থাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. বদরুল হাসান, তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মওদুত হাওলাদারসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Link copied!