আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকুক বা না থাকুক—দেখামাত্র আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ বিষয়ে কোনো শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শরিফ ওসমান হাদির সমর্থকদের প্রশ্নের জবাবে এ নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক সমর্থক অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। তাদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়া হলেও মামলা নেই—এই অজুহাতে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এর জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “কেউ সন্ত্রাসী হলে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে কি না, সেটি বিবেচ্য নয়। সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হলেই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।” এ সময় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে নারায়ণগঞ্জে এক প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা না করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, যিনি নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, তিনি নিজেই ভালো জানেন কোন পরিস্থিতিতে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, “এখানে সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণির মানুষ উপস্থিত আছেন। এমন পরিবেশে কেউ যদি নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করেন, সেটি তার ব্যক্তিগত অনুভূতি। কিন্তু সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল।”
শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। সবাই যেন তার দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। তিনি একজন জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা এবং দেশের জন্য তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
নিরাপত্তা শঙ্কায় ঢাকায় ভারতীয় ভিসা সেন্টার বন্ধ থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই এবং তিনি প্রথমবার বিষয়টি শুনছেন।
অনুষ্ঠানে বিকেএমইএর মাধ্যমে জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশের জন্য পুলিশ ভ্যান প্রদানকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নতুন যানবাহন তাদের দায়িত্ব পালনে কার্যকর সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় পুলিশের বহু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পুলিশের জন্য যানবাহন সহায়তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক।
বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেমের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মো. খোদা বখস চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজিপি ও শিল্প পুলিশ প্রধান গাজী জসিম উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, শিল্প পুলিশ-৪-এর প্রধান (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির এবং জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এম
আপনার মতামত লিখুন :