ফাইল ছবি
মাহফুজ আলমের ১৩ মাস, আসিফ ভুঁইয়ার ১৫ মাস। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগের দিন পদত্যাগ করলেন ছাত্রদের প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টা। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন থেকে স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। মাহফুজ আলম শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান, পরে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পান।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের আশা ছিল, নতুন বন্দোবস্তের অংশ হিসেবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয় কমানো হবে। কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, বিদায়ী দুই উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড সেই প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বরং তাঁদের মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠেছে।
আসিফ মাহমুদের সময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ২৩টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ৩২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধ, প্রকল্পের গুণগত মান বৃদ্ধি বা সচ্ছতা বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বিভিন্ন বিতর্কিত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, ঢাকা-১০ এলাকার ২৭৩টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটিও নির্বাচনজীবী নয়।
প্রকল্প বরাদ্দ ছাড়াও আসিফ মাহমুদ সরকারের আওতাধীন সংস্থায় নিয়োগ ও ঠিকাদার লাইসেন্সে স্বজনপ্রীতির অভিযোগে সমালোচিত হন। নিজের পছন্দের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকেও নিয়োগ দেন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অফিসে ঠিকমতো উপস্থিত হতেন না এবং টেলিভিশন লাইসেন্স দেওয়া প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সহকর্মীদের সুবিধা দিয়েছেন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তাঁর কার্যক্রম লক্ষ্যণীয় ছিল না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুই ছাত্র উপদেষ্টার সরকারের দায়িত্বে থাকা সময়কাল ছিল বিতর্কময়। বিশেষ কোনো উল্লেখযোগ্য সংস্কার বা অর্জন দেখা যায়নি। গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘তাদের দায়িত্ব ছিল সংস্কার এবং মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে প্রভাবিত করা, কিন্তু সেটা তারা করতে পারেননি।’
পদত্যাগের আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিদায়ী দুই উপদেষ্টা তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নায়ক হিসেবে পরিচিত এই দুই উপদেষ্টার সরকারি সময়ে কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক এখনও তুঙ্গে রয়েছে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :