ঢাকা: সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ধর্মঘট সব উপেক্ষা করে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করেছে বিএনপি। এ গণ সমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখাল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না।
যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে তাদের চিহ্নিত করা হবে। তারা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে। সারা দেশের মানুষের দাবি এক, দফা এক-বর্তমান জালিম সরকার শেখ হাসিনা পদত্যাগ। এ সমাবেশ থেকে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাই- সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবিতে শনিবার (১৯ নভেম্বর) সিলেটে আয়োজিত বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘খেলা হবে’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপি নেতারা পুলিশকে রেখে খেলতে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সিলেট মহানগরের চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এ গণসমাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেটবাসীর উদ্দেশে বলেন- আপনারা নতুন যুদ্ধে নেমেছেন। এই যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের অধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। শাহজালাল রাহ. যেভাবে যুদ্ধ করে সিলেটে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন আপনাদের সিলেট থেকেই নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। এ যুদ্ধ শেখ হাসিনা সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ।
নিখোঁজ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের প্রায় ১ হাজার নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। অজস্র নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। গুলি করে পঙ্গু করেছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। এই সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। তাদের বিচার এ দেশের মানুষ করবে।
তিনি বলেন, সরকার বিএনপির সমাবেশ দেখে ভয় পাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। এ সমাবেশকে সফল করতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাধার শিকার হয়েছেন। তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন- আওয়ামী লীগ শুধু খেলার ডাক দেয়। তবে তারা তো দরজা বন্ধ করে খেলায় পারদর্শী। যে কারণে পাপিয়ারা ধরা পড়লে ওবায়দুল কাদের আর তার দলের নেতাদের বুক ধড়ফড় করে।
তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী বিএনপি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার ধর্মঘট ডেকে গণপবিরহন চলাচল বন্ধ করে এসব সমাবেশ ঠেকাতে চায়। তবু সমাবেশ হচ্ছে। প্রতিটি গণসাবেশে জনস্রোত নামে। সরকারকে একদিন জবাব দিতে হবে- এসব ধর্মঘট ডেকে প্রতিদিন দেশের কত কোটি টাকার ক্ষতি করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন- সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে, আজকের গণসমাবেশে সিলেটের আলিয়া মাদরাসার মাঠ কানায় কানায় ভর্তি।
বিএনপি’র চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, দুর্ভিক্ষের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় ঠিকে থাকা যাবে না। এই সরকার প্রধান বিশ্বে প্রথম সরকার প্রধান যিনি ভবিষ্যত বাণী করেছেন তার দেশে আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হবে। দুর্ভিক্ষ কিভাবে এড়ানো যাবে সিলেটের মাঠ থেকে বলতে চাই, ১৮ কোটি টাকার ইভিএম প্রজেক্ট করেছেন, নতুন নতুন ফাইল বানান, লাভ হবেনা। দুর্ভিক্ষের দুহাই দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তা থেকে বাদ দিয়ে আসেন, দেশে দুভিক্ষ হবেনা।
বর্তমান সরকারের দুর্নীতি কথা বলে শেষ করা যাবে না। তারা এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়িয়েছিল এ ঘটনায় তারা বলেছিল ব্রিটিশের গোলামী আর কত দিন করবেন। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি করেছে তারা। তারা বলে জনগণের অর্থের টাকায় হয়েছে।তা রুপকথা। যে সময় পদ্মসেতু হয়েছে সে বছরে এডিপি দেখেন সবি ঋনের টাকায় করা। দেশের মানুষে বাঁচার অধিকার আছে, আপনারা দেশের মানুষের বাঁচার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। সিলেটের সমাবেশ দেখে শিক্ষা নেন। স্বাভাবিক ভাবে ক্ষমতা চাড়েন।
সমাবেশে বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব কথায় কথায় বলেন খেলা হবে, খেলা হবে। আমরাও বলতে চাই খেলা হবে। ওবায়েদুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা পুলিশকে রেখে খেলতে আসেন। দুই ঘন্টাও টিকতে পারবেন না। বিএনপি এখনো খেলা শুরু করেনি। বিএনপি খেলতে শুরু করলে দেশে মুজিব কোর্ট পরা কোনো লোক থাকবে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন, এই সরকারের দিন শেষ। তারা এখন পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তাদের পালাতে দেওয়া হবে না।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী বলেন, সিলেট থেকে সরকার পতন আন্দোলন শুরু হলো। ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসেই আমরা সরকারের পতন চাই।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মি আক্তার বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমরা ঢাকা শহরে আসছি। কোন ধানাইপানাই চলবে না। ক্ষমতা ছাড়েন। না হলে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, শেখ হাসিনার পতন ছাড়া আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাব না। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য একটাই শেখ হাসিনার কবল থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। তাকে মুক্ত করার কোনো বিকল্প নাই।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় শুরু হওয়া সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রোকসানা বেগম শাহনাজ। এর আগে কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় সমাবেশ শুরুহয়।
পরে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য শুরু করেন। গণসমাবেশে বক্তারা আরও বলেন- বর্তমান সরকার এই দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশকে বাঁচাতে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে। না হলে দেশ ও মানুষের মুক্তি নেই।
বক্তারা আরও বলেন, আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করছে সরকারের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা নেই। আজকের এই সমাবেশে আমাদের সবার একই কথা- দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে। মানুষ আজ রাস্থায় নেমে এসেছে।
সোনালীনিউজ/এআর
আপনার মতামত লিখুন :