• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমান সরকারের শেষ ডিসি সম্মেলন শুরু আজ 


নিজস্ব প্রতিবেদক  জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৯:৩৩ এএম
বর্তমান সরকারের শেষ ডিসি সম্মেলন শুরু আজ 

ঢাকা: আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩। আগামী বছরের প্রথমদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে এবারের ডিসি সম্মেলন অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ।

নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকালে জেলা প্রশাসকদের চ্যালেঞ্জসমূহ, সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পন্থা; সরকারের নীতি-কৌশল ও গৃহীত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে তিনদিন ব্যাপ্তির এ সম্মেলনে প্রশাসনিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পাশাপাশি ইতিমধ্যে সরকার যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, সেগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের তাগিদও দেওয়া হবে সম্মেলনে যেন এর সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিও সম্মেলনে গুরুত্বারোপ করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার এ সম্মেলন শেষ হবে। তিনদিনে মোট ২৬টি অধিবেশন থাকবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২০টি। এর বাইরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে একটি করে মোট ৪টি এবং অন্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য ২টি অধিবেশন রাখা হয়েছে।

সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশ নেবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।

সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৪৫টি প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রস্তাব এসেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সংক্রান্ত, ২৩টি। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় (১৫টি), পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় (১৩টি), সুরক্ষা সেবা বিভাগ (১১টি) এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (১০টি)।

প্রধান আলোচ্য বিষয় ১২টি : স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণ। ভূমি ব্যবস্থাপনা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম।

স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ। ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন। উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।

সম্মেলনকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নির্দেশনা গ্রহণের পাশাপাশি স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করবেন জেলা প্রশাসকরা। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়বিষয়ক অধিবেশনও সংযুক্ত করা হয়েছে।

রবিবার সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৩’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকরা কী বার্তা নিয়ে মাঠপর্যায়ে ফিরে যাবেন, তা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারবেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সম্মেলনের পর মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের কার্যক্রমে নতুন গতির সঞ্চার হবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ডিসি সম্মেলন। এ তথ্যের উল্লেখ করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনেই প্রশাসনের তরফ থেকে সেভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। নির্বাচনে সহযোগিতার জন্য আমাদের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা আছে। সেই ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাব। আমরা নির্বাচনে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে যাব।

জেলা প্রশাসক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার সম্পর্কে মো. মাহবুব হোসেন গত বছরের তথ্য তুলে ধরেন। বলেন, ২০২২ সালের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ৭৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। সেই সম্মেলনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ এ তিন মেয়াদের মোট ২৪২টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ তিন মাস তা স্বল্পমেয়াদি, এক বছর পর্যন্ত মধ্যমেয়াদি এবং এক বছরের অধিক সময় বাস্তবায়নের কাল হলে সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসলেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারের ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ইস্যুতে সরকারের দিকনির্দেশনা যাবে মাঠ প্রশাসনে। যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে সরাসরি জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে, ফলপ্রসূ হলে তাদের মনে ইতিবাচক ধারণার জন্ম হবে, সরকারের এ যাবৎকালে গৃহীত সেসব কর্মসূচি যথাযথ বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হবে সম্মেলনে।

গত বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ডিসি সম্মেলন হয়নি। এরপর গত বছরের ১৮-২০ জানুয়ারি ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। 

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!