• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল ট্রেনে ঢাকায় এসে সাত বছর বন্দী, অবশেষে মুক্ত অঞ্জনা 


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩১, ২০২৩, ০৯:৩৯ পিএম
ভুল ট্রেনে ঢাকায় এসে সাত বছর বন্দী, অবশেষে মুক্ত অঞ্জনা 

গৃহকর্মী অঞ্জনা আক্তার।ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: শিশু বয়সে সিলেটের ভৈরব থেকে কৌতূহল বসত ট্রেনে উঠেছিল মেয়েটি। ভেবেছিলেন ট্রেন ঘুরে এসে এখানেই তাকে নামিয়ে দেবে। কিন্তু একটা সময়ে নিজেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে আবিষ্কার করে সেই সময়ের শিশু অঞ্জনা। মন খারাপ করে স্টেশনে বসে ছিল। একজন তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে শর্মী নামের এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর সেই নারীর রান্না ঘরেই সাতটি বছর কেটে গেছে মেয়েটির। 

অবশেষে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় মিলেছে মুক্তি। তবে মেয়েটির শরীর জুড়ে শুধু আঘাতের চিহ্ন।

এখন নিজের বয়সটা ঠিকমতো বলতে পারছেন না। ঠিকানা বলছেন কখনো সুনামগঞ্জ আবার কখনো হবিগঞ্জ। বাবা মারা গেছে সেটি তার মনে আছে কিন্তু পরিবারের কারও ঠিকানা জানা নেই।

বলছি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর কলে উদ্ধার হওয়া গৃহকর্মী অঞ্জনা আক্তারের কথা। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতেই রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ২ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে অঞ্জনাকে উদ্ধার করেছে ভাটারা থানা-পুলিশ।

বুধবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। তবে অঞ্জনার দেওয়া ঠিকানা মিলছে না।

থানায় বসে নিজের ওপর হওয়া নির্মম অত্যাচারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন অঞ্জনা। তিনি বলেন, ‘সাত বছর ধরে আমাকে রান্না ঘরেই আটকে রেখেছে। এক বেলা খাবার দিলে অন্য বেলা দিত না। দিন রাত কাজ করাত। কোনো ভুল হলেই কাটা চামচ, খুন্তি, রুটি বানানো বেলন, চাকু দিয়ে আঘাত করত। এমনকি তালা দিয়ে আঘাত করে সামনের দাঁত ভেঙে দিয়েছে।’

হাত, পা, বাহু, গাল, ঠোঁটে আঘাতের চিহ্নগুলো দেখিয়ে অঞ্জনা বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তার পা ফুলে গেছে, বাম হাতে বুড়ো আঙুলের ওপর দগদগে রক্তাক্ত ক্ষতগুলোই বলে দিচ্ছে তার ওপর হওয়া নির্যাতনের ভয়াবহতা।

নির্যাতনের পাশাপাশি খাবার আর অসুস্থতায় মেলে না ওষুধ উল্লেখ করে অঞ্জনা বলেন, ‘আমাকে ঠিকমতো খাবার দিতো না। অসুস্থ হলে ওষুধ দিতো না। বরং শুয়ে থাকলে মারধর কর‍ত। কাপড় দিতো না। রান্না ঘরে-বাইরে বের হতে দিত না। বাসায় কেউ আসলে আটকে রাখা হতো।’

সাত বছর পর যেভাবে অঞ্জনার মুক্তি
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এরিক ও শর্মি দম্পতির বাসায় সাত বছর ধরে আটকে রাখা হয় অঞ্জনাকে। পান থেকে চুন খসলেই শর্মি নির্মম নির্যাতন চালাতেন অঞ্জনার ওপর। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় পাশের ভবনে থাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজল শেখের। প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও অঞ্জনাই একদিন তার ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা তুলে ধরে উদ্ধারের আকুতি জানান। এরপর সজল বিষয়টি তার বাসার অন্যদের ও বাড়ির মালিককে জানান। আজ বুধবার ভোর ৫টায় পড়তে উঠে সজল দেখেন অঞ্জনা তখনো কাজ করছে। কারণ বাসায় অতিথি আসবে। সারারাত ধরে কাজ করা অঞ্জনাকে রাতে শুধু সাদা ভাত খেতে দেওয়া হয়েছে। তখনই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে বিষয়টি জানিয়ে উদ্ধারের অনুরোধ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করে।

উদ্ধারকারীদের নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে জানিয়ে সজল বলেন, ‘মানবিক কারণে মেয়েটিকে উদ্ধারে এগিয়ে এসেছি। সব সময় মেয়েটিকে রান্না ঘরেই দেখতাম। দিন-রাত যখনই দেখি শুধু কাজ করে। এমনকি আজ ভোরেও ঘুম থেকে উঠে দেখি কাজ করে। পরে বিষয়টি ৯৯৯ এ জানাই। পুলিশ যাওয়ার পরেও এই নারী নিজের নাম পরিচয় ভুল বলেছেন। তার বাসায় কোনো কাজের মেয়ে নেই। পরে মেয়েটা চিৎকার দিলে পুলিশের সামনেই তাকে মারধর করা হয়।’

গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয় জানতে চাইলে শর্মি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কোনো নির্যাতন করিনি। মেয়েটি (অঞ্জনা) মানসিকভাবে অসুস্থ। তার রাগ উঠলে সে নিজেই নিজেকে আঘাত করত।’

গৃহকর্মী উদ্ধারের বিষয়ে ভাটারা থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৯৯৯ এ কল পেয়ে আজ ভোরে মেয়েটিকে আমরা উদ্ধার করেছি। তার ঠিকানা খোঁজ করা হচ্ছে।’

নির্যাতনের অভিযোগের বিষয় ওসি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!