• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ঈমান ও ধর্মান্ধ


শফিকুল আলম সবুজ জানুয়ারি ১১, ২০২১, ১২:০৩ এএম
ঈমান ও ধর্মান্ধ

ঢাকা : ‘ঈমান’ আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ বিশ্বাস। পারিভাষিক অর্থ দাঁড়ায়-যাঁকে আমরা না দেখে বিশ্বাস করি তাঁর ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস করাই হলো ঈমান। আল্লাহতায়ালার ওপর ঈমান আনা শিরক থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র অপশন। আল্লাহকে আমরা দেখি না, তবুও তিনি আছেন। এই কথার ওপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপনের নাম ঈমান বা বিশ্বাস। এককথায় অন্ধ বলতে পারি। এই অন্ধটা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মেই আছে। মুসলিমরাই এই অন্ধতা রাখে। কারণ, তাদের চোখ এক্ষেত্রে বন্ধ থাকলেও অন্তরের চোখ দিয়ে তারা ঠিকই আল্লাহতায়ালাকে দেখেন ইবাদতের মাধ্যমে। ইসলামবিরোধী শক্তিরা মুসলিমদেরকেই ধর্মান্ধ বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ধর্মান্ধ বলেই মুসলিমদেরকে গালি দেয়।

আপনারা জানেন, মুসলমানদের প্রধান বিশ্বাস হচ্ছে আল্লাহ। অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেই হবে আল্লাহকে। যদি না করে তারা কেউ মুসলিম নয়। নাস্তিকদের বড় একটা টপিক হচ্ছে"‘যা দেখি না, তাকে মানা অন্ধতা, তাকে মানা মূর্খতা’। আল্লাহকে দেখি না, তাহলে তিনি যে আছেন তার প্রতি অন্ধভাবে বিশ্বাস কেন করব? ইত্যাদি প্রশ্ন তাদের। এসব আজাইরা প্রশ্নের উত্তর দিলেও তারা আমাদেরকে অন্ধ-ই বলবে। কারণ তারা হচ্ছে ‘মকরবাজ’। এজন্য একটা কথা বলি-তোমার যেই বাবা তোমাকে জন্ম দিয়েছে সেটা যে তোমার আসল বাবা তার প্রমাণ কি? তুমিতো তা দেখনি, তোমার মা তোমাকে বলেছে এটা তোমার বাবা। আর তাতেই তুমি অন্ধভাবে বিশ্বাস করলে? এটাই বাবা। এখন যদি আমি প্রশ্ন করি এটা কীভাবে তোমার বাবা? তুমি কী দেখছ? তখন তুমি আমায় সাধারণত বলবা পাগল। তাহলে তো আমিও বলবো-আল্লাহকে বিশ্বাস না করলে তুমিও পাগল।

আল্লাহতায়ালাকে দেখা যায় না, আর দেখা যাবেও না। কারণ, তিনি অদৃশ্যমান। অদৃশ্যমান বলেই আমরা অন্ধ। অন্ধের মতো বিশ্বাস করি আল্লাহ আছে। যেমন সালাত আদায় করতে গিয়ে আমরা কেবলার দিকে তাকিয়ে নামাজ পড়ি। আচ্ছা বলুন-আপনি কাকে সিজদা করেন? যাকে সিজদা করেন তাকে কি দেখেন? তবুও কেন সিজদা করেন? তবে কি আপনি অন্ধ নন? এই না দেখাকে বলা হয় অন্ধ।

ইসলামের মূল আকিদা হচ্ছে আল্লাহ গায়েব। এই গায়েবকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করার নাম ঈমান। ঈমান অর্থ বিশ্বাস। কিসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন? নিশ্চিন্তে একমাত্র আল্লাহর প্রতি, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সাতটি বস্তুর ওপর অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার নাম ঈমান। আর এই সাতটি বিষয়ের ওপর আমল (কাজ) করলেই ঈমানদার।

১. ‘আমানতু বিল্লাহি’ (আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা)। আল্লাহকে কেউ দেখুক আর না দেখুক, আল্লাহ আছেন এই কথা দৃঢ়ভাবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস স্থাপনের নামই হলো আমান-তু বিল্লাহি। আল্লাহর ওপর ঈমান আনা। যদি কেউ সন্দেহ করে তার ঈমান থাকবে না। যার ঈমান থাকবে না, সে মুমিন নয়। আর যে ব্যক্তি মুমিন নয়, সে মুসলিম দাবি করতেই পারে না। ইসলামের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থে সে কাফের। কাফের কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এটাই প্রতীয়মান।

২. ‘ও-মালাইকাতিহি’ (ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা)। আল্লাহতায়ালা মানুষ এবং জিন সৃষ্টির পূর্বে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন। এই ফেরেশতারা হলো নূরের সৃষ্টি। তারা খাওয়া-দাওয়া করে না, প্রস্রাব পায়খানা করে না। তাদেরকে আল্লাহতায়ালা নির্দিষ্ট কিছু কাজ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যেমন: বড় চারজন ফেরেশতার চারটি কাজ। ১. জিবরাইল (আ.) এর কাজ হচ্ছে নবী-রাসুলদের কাছে আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে ওহী নিয়ে আসা। এখন নবীর আগমন বন্ধ। ২. মিকাইল (আ.) এর কাজ হচ্ছে আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে আদেশ আসার সাথে সাথে বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং রিজিক বণ্টন করে দেওয়া প্রাণীদের মধ্যে। ৩. মিকাইল (আ.) এর কাজ হচ্ছে সিঙ্গা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। যখন মহান আল্লাহ তাঁকে আদেশ করবেন, সিঙা ফুঁ দিতে, তখন তিনি সিঙায় ফুঁ  দেবেন। কিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন সব ধ্বংস হয়ে যাবে। তিন ফুঁতে পৃথবী, মানব ও প্রাণীসহ আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি সব ধ্বংস হয়ে যাবে । ৪. আজরাইল (আ.)-এর কাজ হচ্ছে আল্লাহতায়ালার আদেশে প্রাণীর মৃত্যুদান করা। পৃথিবীতে যত মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু তার হাতেই কবজ হয়। ইহা ছাড়াও অসংখ্যা ফেরেশতা আছেন অসংখ্যা কাজে। কেউ সিজদারত, কেউ রুকুরত, কেউ নিয়ত অবস্থায়। আল্লাহতায়ালা প্রথমে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেন, এরপর জিন জাতিকে, অবশেষে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। তিনটা সৃষ্টির তিনটা বৈশিষ্ট্য। ক. ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা খাওয়া-দাওয়া করেন না কিন্তু ইবাদত করেন। তাদের কোনো আকল বা জ্ঞান নেই। তাদের সৃষ্টি করার সাথে সাথে তাদের মেমোরিতে যা ডাউনলোড করে দেওয়া হয়েছে তারা এর বাহিরে অন্যকিছু করতে পারেন না। খ. জিন জাতিকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তাদেরকে আহার করার পাশাপাশি ইবাদতের বৈশিষ্ঠ দেওয়া হতেছে। কিন্তু তারা আবিষ্কার করতে পারে না। কারণ তাদেরকে সেই জ্ঞান বুদ্ধি দেওয়া হয়নি। গ. এরপর আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করলেন। তাঁদেরকে সম্মানিত করলেন। তাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত বানালেন। তাদেরকে দেওয়া হলো ইবাদত করার ক্ষমতা। দেওয়া হলো আহার করার ক্ষমতা। দেওয়া হলো জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষমতা। যা দিয়ে তারা আবিষ্কারসহ নিত্যনতুন বস্তু আবিষ্কার করে জীবিকানির্বাহ করছে এবং হচ্ছে উন্নত জাতি।

৩. ‘ও-কুতুবিহি’ (কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনা)। আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পথপ্রদর্শক প্রেরণ করেছেন বিভিন্ন স্থানে। যুগে যুগে এই পথপ্রদর্শকদের নবী বা রাসুল বলা হয়। এসব নবী-রাসুলদেরকে ছোট ছোট কিতাবসহ প্রেরণ করেন। এই কিতাবকে সহিফা বলে। এতে মানবজাতির পথপ্রদর্শনের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রায় এক লক্ষ কিংবা এক লক্ষ পঁচিশ হাজার নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তম্মধ্যে চারজন বড় নবী প্রেরণ করেন। যাঁদেরকে বড় বড় চারখানা কিতাব দেওয়া হয়। তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল ও  কোরআন। এই চারটার মধ্যে এখন কোরআনকে মান্য করতে হবে বাকী বড় তিনটাসহ ছোট ছোট সব কিতাবের প্রতিও বিশ্বাস করতে হবে। তবেই ঈমানদার হতে পারবে।

৪. ‘ও-রাসুলিহি’ (রাসুলগণের ওপর ঈমান আনা)। পৃথিবীতে এক লারেখ ঊর্ধ্বে নবী পাঠিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। তাঁদের প্রতি ঈমান আনাও ফরজ। তবে শেষ নবীর দেওয়া পথে চলতে হবে আর অন্য নবী (আ.)-দেরকে মানতে হবে।

৫. ‘অল ইয়াওমিল আখিরি’ (আখেরাতের প্রতি ঈমান আনা)। এই দুনিয়ার পরেও পরকাল আছে যা আমরা দেখি না। কিন্তু বিশ্বাস করি। এই যে বিশ্বাস এটাতো অন্ধভাবেই বিশ্বাস করতে হবে অথবা সে মুমিন হতে পারবে না।

৬. ‘ওল কদরি খাইরিহি’ ( তাকদিরের (ভাগ্যের, ওপর ঈমান আনা)। তকদিরে যা কিছু আছে তার ওপর ঈমান আনাও ফরজ। তকদীর মানে ভাগ্য। ভালো মন্দ সবকিছু তাকদির। তবে এই মন্দ থেকে বাঁচতে আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। তবেই মন্দ তাকদির পরিবর্তন করে আল্লাহতায়ালা কল্যাণকর তকদির দান করবেন। এটাও অন্ধভাবে বিশ্বাস এবং মান্য করতে হবে।

৭. ‘ওয়াল বাসিবাদাল মাউত’ (মৃত্যুর পর জীবিত হওয়ার উপর)। মৃত্যুর পর আবার জীবিত করা হবে। বিচার করা হবে দুনিয়াতে বেঁচে থাকার এই ক বছরে কে কী কাজ করেছে। যার যেমন কর্ম সে সেরকম ফল পাবে মৃত্যুর পরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইসব বিষয়ের ওপর কারা ঈমান আনে? নিশ্চয় যারা মুসলমান তারাই আনে! আচ্ছা আপনারা যারা মুসলিম তারা কি এই সাতটা জিনিস দেখছেন? দেখেননি তবুও বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ অন্ধভাবে বিশ্বাস। আর এই অন্ধ বিশ্বাসকেই বলা হয় ধর্মান্ধ। এবার বুঝেন, ওরা কোথায় আঘাত করছে? আর এর সাথে সুর মিলাচ্ছে কিছু নামধারী মুসলমান।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

Wordbridge School
Link copied!