• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সেন্টমার্টিনে ঘুরতে দিতে হবে আলাদা ট্যাক্স, আবেদন অনলাইনে


লাইজুল ইসলাম সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম
সেন্টমার্টিনে ঘুরতে দিতে হবে আলাদা ট্যাক্স, আবেদন অনলাইনে

ঢাকা: দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপে সাধারণ পর্যটকরা যেতে পারে শুধু বছরের মাত্র চার থেকে পাঁচ মাস। সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। এই কয়েকমাসে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যায় প্রায় ৮ লাখ। এত পর্যটকের কারণে সেন্টমার্টিনকে বলা হয় প্রতিবেশগত সংকটময় এলাকা। প্রতিবেশ যে শুধু পর্যটকরা নষ্ট করছেন তা নয়! সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে দেখা দিয়েছে সেখানে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। 

এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০১৬-২০১৭-২০১৮-২০১৯ সালে পর্যায়ক্রমে পর্যটক বাড়তে থাকে। উপজেলা প্রশাসনের হিসেবে দেখা গেছে এই সময়টাতে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ সেন্টমার্টিনে ঘুরতে গেছেন। কিন্তু করোনার মধ্যে সেন্টমার্টিনে পর্যটকের হার কমে যায়। ফের ২০২২ সালে এক মৌসুমে প্রায় ৮ লাখ মানুষ সেন্টমার্টিনে ঘুরতে গিয়েছে বলে জানা গেছে। এত মানুষের চাপ নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত হোটেল মোটেল রিসোর্ট তখন সেখানে ছিলো না। সাপ্তাহিক ছুটির সময় দেখা গেছে সড়কেও মানুষ বসে আছেন। 

এত মানুষের চাপ দেখে সেন্টমার্টিনে হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট তৈরি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। সেন্টমার্টিনে যে রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে তাতে প্রতিবেশ ভয়ংকর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যাদিও প্রশাসনের কঠোর নজরদাড়ি থাকার কথা ছিলো কিন্ত তা নেই বললেই চলে। প্রশাসন অনেক সময় ম্যানেজ হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব স্থাপনা করতে গিয়ে ঝাউবাগান ও দ্বীপের মধ্যেও গাছপালা নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। প্রবাল ব্যবহার হচ্ছে স্থাপনা তৈরির কাজে। 

যে চার মাস জাহাজ চলাচল করে সেই সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক বেড়াতে যান সেন্টমার্টিনে। এই সময়টুকুতে সাগর যদি কখনো উত্তাল থাকে তাহলে বন্ধ থাকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল। সেই সময় সাধারণ পর্যটকরা সেন্টমার্টিনেই অবস্থান করেন। এছাড়া সেন্টমার্টিনে সারাবছর ১০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ বসবাস করেন। আর সারা বছর কিছু পর্যটক জীবনে ঝুঁকি নিয়ে স্পিড বোট ও ট্রলারে সেন্টমার্টিন বেড়াতে যান। 

সেন্টমার্টিনে পর্যটকের অবাধে অতিরিক্ত যাতায়াত বন্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই চিন্তা করছিলো সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ সালে একবার কথা হয় অনুমতি নিয়ে যেতে হবে সেন্টমার্টিনে। কিন্তু সেটা তখন বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে এবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। 
সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন কত পর্যটক যেতে পারবে সেটা নির্ধারণ করবে সরকারের একটি দপ্তর। অনলাইনে আবেদন করে অনুমতি সাপেক্ষে যাওয়া যাবে সেন্টমার্টিন। দিতে হবে পর্যটন ট্যাক্স।

চলতি বছরের ২৫ মে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ১৩ অনুযায়ী সেন্টমার্টিন নিয়ে একটি নির্দেশিকা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হলো। এটা যতদ্রুত সম্ভব কার্যকর করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এবং পরিবেশ বান্ধব নির্দেশিকা, ২০২৩’ নামে এই নির্দেশিকাকে জানা যাবে। 

এতে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের স্থাপনা যদি সেন্টমার্টিনে করতে হয় তবে অবশ্যই তিনটি দপ্তরের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৬ অনুযায়ী স্থাপনা নির্মান করতে হবে। এরসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পরিবশে অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। এটি তদারকি করবেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। 
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এতে সহযোগিতা করবে। সরকারি কোনো স্থাপনা পর্যটকদের থাকার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

সেন্টমার্টিনে যাওয়ার আগে অনলাইনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করতে হবে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদন পাওয়ার পর যেতে পারবেন সেন্টমার্টিন। তবে সেটিও আবেদনের সময় যে তারিখে ট্রাভেলের দিন নির্ধারণ করা হবে সেদিন যেতে হবে। আগে পরে যাওয়া যাবে না। 

সেন্টমার্টিনে ঘুরতে হলে ট্রাভেল ট্যাক্স বা এই জাতীয় একটি ফি সরকারকে দিতে হবে। তাও এই প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। এগুলো বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয় ও সহযোগীতা করবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। 

এছাড়া, মাছের আলাদা বাজার নির্মাণের কথা বলা হয়ছে। যাত্রীবাহী জাহাজ নির্ধারিত স্থানে বার্থিং করা। আইন-শৃঙ্খলা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। মাছ ধরার ট্রলারে যাত্রী না ওঠানো। বন অধিদপ্তরের মেরিন প্রটেকটেড কোর এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। সেন্টমার্টিনে কত পর্যটক এক রাতে থাকতে পারবে তা নির্ণয় করা। এটি নির্ণয় করে পর্যটকদের অনুমতি দেয়া হবে। এসব বাস্তবায়ন করবে নৌ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও টুরিস্ট পুলিশ।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি। সেন্টমার্টিনে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিকদের বৈঠক এই মাসেই হবে। সেই বৈঠকে সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা হবে। এরপর তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন। 

তবে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী সোনালীনিউজকে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অন্তত ১০ বছর আগে নেয়া প্রয়োজন ছিলো। তাহলে যে ক্ষতি সেন্টমার্টিনের পরিবেশের হয়েছে তা হতো না। আর প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ স্থাপনা এখনো হচ্ছে। এগুলো ঠেকাবে কে?

প্রজ্ঞাপন।
প্রজ্ঞাপন।
প্রজ্ঞাপন।

এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!