• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

যে লড়াই তামিম আর হৃদয়ের


ক্রীড়া প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
যে লড়াই তামিম আর হৃদয়ের

ঢাকা : এমনিতে দুজনের মধ্যে ‘লড়াই’ ধরনের কিছু থাকার কথা নয়। একজনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়, ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও এখন গোধূলি বেলা। আরেকজনের ক্যারিয়ার সবে প্রভাতের সূর্য কিরণের ছোঁয়ায় স্নাত। দুজনের তেমন কোনো সংযোগও নেই। দুই প্রজন্মের দুই ধরনের দুই ঘরানার দুই ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও তাওহিদ হৃদয়কে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে এবারের বিপিএল ফাইনাল।

হ্যাঁ, ফাইনালে দুজনই লড়বেন ট্রফির জন্য। তবে সেই চেষ্টা তো বাকি ২০ জনেরও থাকবে। কিন্তু বিপিএলের ফাইনালে এবার তামিম ও হৃদয়ের একটি ব্যক্তিগত দ্বৈরথও থাকছে। টুর্নামেন্টের রান সংগ্রহের চূড়ায় থাকবে কার নাম?

ফাইনালের আগ পর্যন্ত একটি ইনিংস বেশি খেলে একটু এগিয়ে তামিম। তবে সেই ব্যবধান এতই সামান্য যে, দুজনকে আসলে পাশাপাশিই রাখা যায়। ১৪ ম্যাচ খেলে ৪৫৩ রান করেছেন তামিম। ব্যাটিং গড় ৩৪.৮৪, স্ট্রাইক রেট ১২৫.৪৮। ফাইনালে উঠতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে একটি ম্যাচ কম খেলতে হওয়ায় হৃদয়ের ইনিংসও একটি কম। ১৩ ইনিংসে ৪৪৭ রান তার। গড় (৪০.৬৩) ও স্ট্রাইক রেটে (১৪৯.৪৯) তিনি বেশ এগিয়ে তামিমের চেয়ে।

মৌসুমজুড়ে ধারাবাহিকতা, ব্যাটিংর কার্যকারিতা আর প্রভাববিস্তারী ইনিংস বিবেচনায় নিলে হৃদয়ই এবারের আসরের সেরা ব্যাটসম্যান এখনও পর্যন্ত। তবে সর্বোচ্চ রানের তালিকা তো নিখাদ কিছু সংখ্যা। সেখানে চূড়ান্ত ফয়সালা হবে ফাইনালেই।

বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে সফলতম ব্যাটসম্যান তামিমই। ১০২ ইনিংস খেলে ৩ হাজার ৩৮৩ রান তার। সবচেয়ে বেশি ২৮ ফিফটি এসেছে তার ব্যাট থেকে। দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছক্কা ও একাধিক সেঞ্চুরি করার একমাত্র কৃতিত্বও তার। এক আসরের সর্বোচ্চ রান অবশ্য তিনি একবারই করতে পেরেছেন আগে। ২০১৬ সালে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ১৩ ম্যাচের ৬টিতেই ফিফটি করেছিলেন তিনি। মোট রান ছিল ৪৭৬ রান। ৮ বছর পর তার সামনে হাতছানি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।

চোট আর বিরতি কাটিয়ে অনেক দিন পর এই টুর্নামেন্ট দিয়েই তিনি ফিরেছেন মাঠে। ফেরার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন। পরের ম্যাচে করেন ৩৩ বলে ৪০। তবে সত্যি বলতে সময়টাতেও তাকে পুরোপুরি সাবলিল মনে হচ্ছিল না। শরীরের ওজন বাড়তি চোখে লাগছিল, ফিটনেস আর রিফ্লেক্সের ঘাটতিও ফুটে উঠছিল শুরুর ম্যাচগুলিতে। থিতু হয়ে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন বারবার।

প্রথম ৮ ইনিংসে ৫ বার ২০ ছুঁয়েও কোনোটিকে তিনি নিতে পারেননি ফিফটিতে। একটি ইনিংসে ৪৯ করলেও বল খেলেন ৪৬টি। তবে টুর্নামেন্টের পরের ভাগটায় ক্রমে স্বরূপে ফেরার কাছাকাছি দেখা যায় তাকে। চট্টগ্রামে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৪৫ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা হন। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে করেন ২০ বলে ৩৩। প্লে-অফ নিশ্চিত করার ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে জয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ হন ৪৮ বলে ৬৬ করে। এলিমিনেটর ম্যাচে ৪৩ বলে অপরাজিত ৫২ করে আসরের প্রথম ম্যাচসম্যান হিসেবে পেরিয়ে যান চারশ। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে অবশ্য স্রেফ ১০ রানেই বিদায় নেন।

হৃদয়ের ক্যারিয়ারের বাঁক ঘুরে যাওয়ার শুরু গত বিপিএল দিয়ে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ১৪০.৪১ স্ট্রাইক রেটে ৪০৩ রান করেন তিনি। চোখধাঁধানো সব শট আর অসাধারণ কিছু ইনিংস দিয়ে নিজেকে নতুন করে চেনান বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ওই পারফরম্যান্সের কারণেই জাতীয় দলে সুযোগ মেলে। সেখানেও সাফল্যের পথ ধরে ছুটতে থাকেন। এবার বিপিএলের আগে সিলেট থেকে তাকে সরাসরি চুক্তিতে দলে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সেই পারিশ্রমিকের অঙ্ক কোটি টাকারও বেশি।

হৃদয়ের কাছে তাই যেমন গতবারের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা প্রত্যাশিত ছিল, তেমনি ছিল কোটি টাকার চাপও। তিনি সব চ্যালেঞ্জ জয় করেছেন ব্যাটের দাপটে।

৪১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে আসর শুরু করেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। পরের পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দুটিতে পেরিয়ে যান ৩০। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারছিলেন না। অবশেষে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে মিরপুরে ৫৭ বলে ১০৮ রানের অসাধারণ অপরাজিত ইনিংস খেলে প্রত্যাশার সত্যিকারের প্রতিদান দেওয়ার শুরু করেন। এক ম্যাচ পরই খুলনার বিপক্ষে উপহার দেন আরেকটি বিস্ফোরক ইনিংস। এবার অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে ৯১ করে।

সবশেষ কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ১৮৬ রান তাড়ায় অসাধারণ এক জুটি গড়েন লিটন কুমার দাসের সঙ্গে। তার ৪৩ বলে ৬৪ রানের ইনিংস সেদিন ঘুরিয়ে দেয় রান তাড়ার মোড়।

মজার ব্যাপার হলো, এতটা সফল টুর্নামেন্টে তিনটি ম্যাচে শূন্য রানেও ফিরেছেন হৃদয়। দুটিতে আউট হয়েছেন প্রথম বলে, আরেকটিতে দ্বিতীয় বলে। তার সর্বোচ্চ রান স্কোরার হওয়ার সম্ভাবনায় চোট লেগেছে তাতে।

তবে যে ম্যাচগুলিতে বড় রান পেয়েছেন, যতটা দাপটে ব্যাটিং তিনি করেছেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য বিপিএলে ধারাবাহিকভাবে তা দেখানো বিরল।

এবারের আসরে এখনও পর্যন্ত ২৪টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। এক আসরে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য তা রেকর্ড।

দুজনের দলেই তারকা আছেন আরও অনেক। দুজনের দলেই আছেন আরও পারফরমার। তাদের ওপর দলের নির্ভরতা প্রবল নয়। তবে তারা দুজন যদি পারফর্ম করতে পারেন, দলের কাজও তাহলে সহজ হয়ে ওঠে অনেকটা। দলকে এগিয়ে নেওয়ার পথে যদি নিজেকেও রানের চূড়ায় রাখা যায়, এর চেয়ে দারুণ কিছু তো আর হতে পারে না!

সেই সোনায় সোহাগা সমাপ্তির আশাতেই ফাইনালে নামবেন তামিম ও হৃদয়।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!