• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্যফ্রন্টে ‘ক্যু’ : কামাল আউট, তারেক ইন


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৯, ২০১৮, ১১:৫৮ এএম
ঐক্যফ্রন্টে ‘ক্যু’ : কামাল আউট, তারেক ইন

ঢাকা : রাতের অন্ধকারে ছিনতাই হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব। ড. কামাল হোসেনকে হটিয়ে ফ্রন্টের মূল নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে জানিয়ে দিয়েছেন, ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কারা কারা নির্বাচন করবে, তা তিনিই চূড়ান্ত করবেন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, তারেক রহমান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের কাছে ২০ দলের শরিক এবং ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন চাহিদার তালিকা চেয়েছেন। এই তালিকা থেকে তারেক রহমানই ঠিক করবেন ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

অথচ, দুদিন আগেই সিদ্ধান্ত ছিল অন্যরকম। মাতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সবাই একমত হয়েছিল যে, শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত হবে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে।

এদিকে রোববার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু হয়েছে। সাক্ষাৎকারের জন্য মনোনয়ন বোর্ডের প্যানেলে আছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তবে মূল সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তারেক রহমান।

বিএনপি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দেখা গেছে, সিনিয়র নেতারা বসে আছেন, আর একটি দেয়ালে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে তারেক রহমানের সরাসরি ভিডিও। মনোনয়ন বোর্ডে থাকা ল্যাপটপের মাধ্যমে তারেক রহমান সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। সকালেই ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় ছবি ও ভিডিওসহ তারেক জিয়ার সাক্ষাৎকার নেওয়ার বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হয়।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তারেক জিয়ার সাক্ষাৎকার গ্রহণে এরই মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। বিএনপির মনোনয়ন সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরই ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য শরিকদের পক্ষ থেকে তারেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ জানান ড. কামাল।

ড. কামাল মির্জা ফখরুলকে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কথা ছিল, নির্বাচনের আগে তারেক জিয়াকে আপনারা আড়ালে রাখবেন। তারেকই যদি সবকিছু করে, তারেকই যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে আর আমাকে কেন? আমাকে ছেড়ে দিন।’

জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির শর্ত ছিল, পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে তারেক রহমান পুরোপুরি অনুপস্থিত থাকবেন। কারণ তারেক রহমানকে নিয়ে জাতীয় ও অন্তর্জাতিক ভাবে অনেক আপত্তি আছে। সেই আপত্তির কারণেই ড. কামালকে সামনে আনা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেওয়ার ঘোষণার পরপরই পাল্টে যেত থাকে দৃশ্যপট। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন তারেক রহমান। শরিকদের অন্তত দুই নেতাকে তিনি বাগে আনেন। তারেক রহমান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবার পর, গত শনিবার ঐক্যফ্রন্টের সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

এসময় গণফোরাম ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের কোনো শরিকই এর প্রতিবাদ করেননি। গত শনিবার রাতেই এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হয়, তাহলে যেই প্রধানমন্ত্রী হোক আসল নেতা হবেন তারেক রহমান।

সূত্রমতে, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে ঐ সরকারের প্রথম কাজ হবে তারেককে দেশে ফেরানো। তার মামলা প্রত্যাহার এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো। এই কাজ সম্পন্ন হলেই ঐক্যফ্রন্টকে ‘গলা ধাক্কা’ দেওয়া হবে বলেই মন্তব্য করছেন বিএনপির অনেক নেতা।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মূল আপত্তির জায়গা ছিল তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে নির্বাচন করলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওয়া ভবনের দুর্নীতি সামনে আসবে। তারেক এবং তার বন্ধুদের অপকর্মের চর্চা হবে। এই প্রেক্ষাপটেই ড. কামাল হোসেনকে সামনে আনা হয়।

সবাইকে দেখানো হয়, তারেক এবং জিয়া পরিবারের অধ্যায় শেষ। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন বিএনপি আত্মপ্রকাশ করেছে। যে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। কিন্তু দলের কর্তৃত্ব জিয়া পরিবারের বাইরে যাওয়ার আগেই, নেতৃত্ব নিয়ে নিলেন তারেক রহমান। এখন তার নির্দেশেই চলবে ঐক্যফ্রন্ট।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, ‘টাকা দিয়েই আমরা ড. কামাল কিনেছি। কাজেই তিনি তারেক রহমানের নির্দেশেই কাজ করবেন।’ যদিও বাইরে ড. কামাল নীরব, কিন্তু ভিতরে তিনিও লজ্জায় পড়েছেন। কারণ, আংকেল থেকে তারেক এখনই তাকে কামাল সাহেব ডাকতে শুরু করেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!