• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

চিভ চাষ হয়ে উঠতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৯:২০ এএম
চিভ চাষ হয়ে উঠতে পারে পেঁয়াজের বিকল্প

ঢাকা : চিভ মসলা জাতীয় বহুবর্ষজীবি একটি ফসল, এর উৎপত্তিস্থল সাইবেরিয়ান, মঙ্গোলিয়ান ও নর্থ চায়না অঞ্চলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত চীনের জনপ্রিয় একটি মশলা ফসলের তালিকায় অবস্থান এই চিভের।

আমাদের রসনাপ্রিয় বাঙালিদের মসলা খাদ্য পেয়াজ ও রসুনের স্বাদ বা গুণাগুণ চিভের মধ্যে থাকায় আপদকালিন সময়ে পেঁয়াজ বা রসুনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এই চিভ এমন ভাবনায় বিগত ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বারী) বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় বারী চিভ-১ নামের একটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছেন। এখন অনেকটা পেঁয়াজ রসুনের বিকল্প তৈরীতে আশার সঞ্চার হয়েছে এই চিভকে ঘিরে।

চিভ গাছে ফুল

দীর্ঘদিন চিভ নিয়ে গবেষণা করছেন আঞ্চলিক মশলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী। তার ভাষ্য, পৃথিবীর অনেকে দেশে চিভ সাধারণত স্যুপ, সালাদ ও চাইনিজ ডিসে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা লিলিয়ান আকৃতির ফ্লাট, পাতার কিনারা মসৃণ ও এর বাল্ব লম্বা আকৃতির। চিভের স্বাদ অনেকটা আমাদের দেশীয় মশলা পেঁয়াজ রসুনের মত। চিভ হজমে সাহায্য করে, রোগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাগুণ বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, নায়াসিন, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান। চিভ সাধারণত দেশের পাহাড়ি এলাকা সিলেট ও চট্টগ্রামে চাষ হয়ে থাকে। তা ছাড়াও এখন অনেকটা  দেশের পেয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, বগুড়া ও লালমনিরহাট এলাকায় এ চিভ চাষের উজ্জল সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। একবার এই চিভ গাছ লাগালে দীর্ঘদিন ধরে ফল পাওয়া যায়। বাড়ির আঙিনায় বা টবে এই ফসলের চাষ করা যায়।

এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো জানান, বিবিএস ২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে বর্তমানে বাৎসরিক পেয়াজ উৎপাদন হয় ১৭.৩৫ লাখ মেট্রিকটন যদিও দেশে চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ মেট্রিকটন। বাকী পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে এই চিভকে ব্যবহার করা গেলে আমদানীনির্ভরতা কমে আসবে। এছাড়াও এই চিভ জাতীয় ফসলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এসব সারাবছর ধরেই চাষ করা যায়।

বগুড়ায় কৃষি গবেষণাকে পরীক্ষামূলক চিভ চাষ

বারি চিভ-১: দেশে পেয়াজের ঘাটতি মেটনোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় বিগত ২০১৭ সালে বারি-১ নামের উচ্চফলণশীল চিভ জাতের অবমুক্ত করা হয়। ইতিমধ্যেই এই চাষ সম্প্রসারনে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে, পাতার দৈর্ঘ্য হয় ২৩-৩০ সেন্টিমিটার। বাল্ব লম্বা আকৃতির এর দৈর্ঘ্য হয় এক থেকে দেড় সেন্টিমিটার পর্যন্ত। প্রতি হেক্টরে পাতাও গাছ সহ উৎপাদন হয় ১০-১২ টন। চারা লাগানোর সময় থেকে ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়। বছরে ৪-৫ বার ফসল সংগ্রহ করা যায়।

এ বিষয়ে মশলা ফসল বিশেষজ্ঞ আঞ্চলিক মশলা গবেষণা কেন্দ্র (বিএআরআই) গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার আমাদের সময়কে জানান, পেঁয়াজ রসুনের বিকল্প হিসেবে আদর্শ একটি মশলা জাতীয় ফসল চিভ। এর গুণাগুণ ও পেঁয়াজ-রসুনের চেয়ে বেশী। দেশে ব্যাপকভাবে চিভ চাষ করা গেলে পেঁয়াজ-রসুনের ঘাটতি এই চিভ দিয়ে মেটানো সম্ভব হবে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!