• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
লাদাখের সীমান্ত দ্বন্দ্ব

ভারত-চীন ৩য় দফা বৈঠক সম্পন্ন, সিদ্ধান্ত নিয়ে ধোঁয়াশা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ১, ২০২০, ০২:০৭ পিএম
ভারত-চীন ৩য় দফা বৈঠক সম্পন্ন, সিদ্ধান্ত নিয়ে ধোঁয়াশা

ঢাকা : লাদাখের সীমান্ত দ্বন্দ্বকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে দ্বিতীয়বারের মতো মঙ্গলবারও (৩০ জুন)  দীর্ঘ প্রায় ১১ ঘণ্টাব্যাপী ম্যারাথন বৈঠক চললো ভারত-চীন কোর কমান্ডার পর্যায়ের।

ভারত সরকারের সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠকে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন সংঘাতের এলাকা থেকে সেনা সরানোর চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকায় কীভাবে উত্তেজনা প্রশমিত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সূত্রের খবর, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চীনের 'নয়া দাবি' নিয়ে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতীয় প্রতিনিধিদল। একইসঙ্গে সীমান্তে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গালওয়ান উপত্যকা, প্যাংগং সো লেক-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চীনা সেনা সরানোর দাবিও জানানো হয়েছে।

চুশুলের বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন লেহ'র ১৪ কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিং। চীনের তরফে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ শিনজিয়াং সামরিক অঞ্চলের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিন।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্য মতে, মঙ্গলবারর দুপুর নাগাদ বৈঠক শুরু হয়েছিল, তা রাত ন'টা পার করেও চলেছে। সেই ম্যারাথন বৈঠকে সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় সামলানোর ক্ষেত্রে যে সব চুক্তি রয়েছে, কঠোরভাবে সেগুলো মেনে চলার প্রসঙ্গে কথা  তোলে ভারত। একইসঙ্গে বৈঠকে দু'পক্ষের মধ্যে আস্থা গড়ে ওঠার উপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়। তবে বৈঠকের পর দু'পক্ষ কোন কোন ইস্যুতে  মতৈক্য সৃষ্টিতে সফল হলো তা নিয়ে সরকারিভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

এর আগেও দু'দেশের দুটি  কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম বৈঠকটি গত ৬ জুন মলডোতে হয়েছিল। সেখানে দু'দেশ সেনা সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত মতো কোনো পদক্ষেপ  গৃহিত হয়নি। যার প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় দু'দেশের সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেই ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২২ জুন আবারও বৈঠকে বসেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিং এবং চীনের কমান্ডার। প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে চলে সেই বৈঠক। সেখানেও ‘পারস্পরিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে সেনা সরানো’-র বিষয়ে একমত হয় দু'পক্ষ। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা  যায়নি।

দ্বন্দ্ব নিরসনে ভারত-চীন কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক চলছে : চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার জেরে নতুন করে সৃষ্ট টানাপড়েনের মধ্যেই লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি)  চলমান উত্তেজনা কমাতে কোর কমান্ডার পর্যায়ের তৃতীয় দফা বৈঠক শুরু  করেছে  ভারত-চীন।

মঙ্গলবার  (৩০ জুন) দুপুরের পর পরই পূর্ব লাদাখের চুসুল সীমান্ত সংলগ্ন চীন-নিয়ন্ত্রিত মলডোতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে রয়েছেন লেহতে মোতায়েন  ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৪ নম্বর কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরেন্দ্র সিংহ এবং চীনের দক্ষিণ শিনজিয়াং মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট কমান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিন।

এর আগে ২২ জুন, সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে এই দুই সেনাকর্তা প্রায় ১১ ঘণ্টাব্যাপী এক  ম্যারাথন বৈঠক করেছিলেন। গালওয়ান উপত্যকায় ১৫ জুনের সংঘর্ষের পরে এলএসি’তে উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে সেই বৈঠকে ভারতের তরফে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দেশটির  পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের  বরাত দিয়ে  সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, মুখোমুখি অবস্থান থেকে দু’তরফের সেনা পিছনো, এলএসি বরাবর সেনার সংখ্যা কমানো এবং যাবতীয় নির্মাণের কাজ ও শিবির স্থাপন বন্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল সেই তালিকায়।

ভারতীয়  গণমাধ্যমের দাবি, বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার উপগ্রহ চিত্র বলছে, ২২ জুন এবং তার পরে গালওয়ানের সংঘর্ষস্থলসহ পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় চায়না পিপলস লিবারেশন আর্মির তৎপরতা বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে চলছে বাঙ্কার ও শিবির তৈরি এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও যানবাহন মোতায়েনের কাজ।

মূলত, ৬ জুন মলডোতে অনুষ্ঠিত কোর কমান্ডার স্তরের প্রথম বৈঠকে এলএসি’তে স্ট্যান্ড  অফ অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়ে ঐকমত্য হলেও চীন সেনা তা মানেনি বলে অভিযোগ করে ভারত। তারই পরিণতি গালওয়ানের পিপি-১৪-তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দাবি দেশটির সেনাবাহিনীর।

এদিকে ভারতের সরকারি সূত্রের  বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, গালওয়ানের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে লাদাখ অঞ্চলের গোগরা হট স্প্রিং, প্যাংগং লেকের উত্তরে ফিঙ্গার এরিয়া ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ ঘটানোর পাশাপাশি নিজেদের ‘অবস্থান’ মজবুত করেছে চীন সেনারা।

সূত্রে আরো বলা হয়, দৌলত বেগ ওল্ডি বায়ুসেনা ঘাঁটির দক্ষিণে দেপসাং উপত্যকায় এলএসি পেরিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার ঢুকে এসে ‘ওয়াই-জংশনে’ পোস্ট বসিয়েছে চীনের সেনাদল। ফলে ভারতীয় বাহিনীর পেট্রোলিং পয়েণ্ট ১০ এবং ১৩তে যাওয়া আসা বাধাগ্রস্ত  হচ্ছে।

তবে এ প্রসঙ্গে এখনও বিস্তারিত কোনো মন্তব্য  প্রকাশ করেনি চীন। সূত্র : আনন্দবাজার

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!