• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সুখবর দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৬, ২০২০, ০৩:৩০ পিএম
সুখবর দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ঢাকা : করোনাকালে সুখবর পাওয়া যাচ্ছে দেশের ব্যাংক খাত থেকেও। ২০১৯ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ বছর সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খেলাপি ঋণ কমেছে ১৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে অর্থনীতির অন্তত ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সূচক ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলে দিচ্ছে, ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। যার প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যেও। বিবিএসের হিসাবে করোনাভাইরাসের মধ্যেও গেলো ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয়ও দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে ২০৬৪ ডলারে উঠেছে।

আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার মধ্যে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড হয়েছে। এই করোনাকালেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড গড়েছে। করোনার মধ্যে বেড়ে গেছে আমদানি বাণিজ্য। একইভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রফতানি খাতও। শুধু তাই নয়, এই করোনাকালে সুবাতাস বইছে শেয়ারবাজারেও।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংকিং খাতের কাগুজে চিত্র সুখবর দিলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে সেগুলোকে খেলাপি দেখানো হচ্ছে না। যদিও মনে করা হচ্ছে, অনেকেই বোধ হয় টাকা ফেরত দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কেউ টাকা ফেরত দিচ্ছে না।’

তিনি উল্লেখ করেন, খেলাপি হয়ে যাওয়া যে ৫০ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে সেগুলোও ফেরত পাওয়া যাবে না।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে আঘাত হানে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। এ সঙ্কটকালে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেয় সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। অর্থাৎ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনও ঋণের শ্রেণিমান পরিবর্তন করা যাবে না। যে ঋণ যে শ্রেণিতে আছে, সে অবস্থাতেই থাকবে।

এর আগে অবশ্য ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের নির্দেশনায় পুনঃতফসিলে গণছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছেন ঋণখেলাপিরা। ২০১৯ সালের ১৬ মে নীতিমালায় এ ছাড় দেওয়ার পর থেকে বিশেষ বিবেচনায়সহ গত বছর পুনঃতফসিল হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ খেলাপি ঋণ।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নীতি সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, গত বছর মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়।

তথ্য বলছে, গত বছর ৫২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করা হয়। এর মধ্যে শেষ তিন মাস অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়েই পুনঃতফসিল করা হয় ২১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এসব কারণে আদায় না বাড়লেও গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকায় নেমে আসে। এর তিন মাস আগে তথা গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে নতুন করে কোনও ঋণ খেলাপি করা হচ্ছে না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, তিন মাস আগে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।গত জুলাই মাস থেকে প্রণোদনার ঋণ ব্যাপকভাবে বিতরণ শুরু হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে আগামী সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!