সিদ্ধান্ত ‘পাল্টাচ্ছে’ শ্রীলঙ্কা

বাংলাদেশিদের ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা দেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা বলেছেন শ্রীলঙ্কার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ ডি সিলভা।

বিবিসি সিংহলাকে তিনি বলেছেন, ওই সিদ্ধান্ত বদলাতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন দপ্তরকে দেয়া হয়েছে। হর্ষ ডি সিলভা বলেছেন, “বাংলাদেশিদের অন অ্যারাইভাল ভিসা না দেয়ার বিষয়টি তার সরকারের সিদ্ধান্ত নয়, ইমিগ্রেশন দপ্তরের প্রধান ‘নিজের সিদ্ধান্তে’ ওই পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা বাতিল করতে বলা হয়েছে, তিনি রাজি হয়েছেন, আশা করছি, বিষয়টির একটা সুরাহা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে।”

শ্রীলঙ্কার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।’ শ্রীলঙ্কা চলতি সপ্তাহের শুরুতে বিনা নোটিশে বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়।

এর ব্যাখ্যা জানতে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসাকেরাকে গত রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। তার কাছ থেকে কোনো ব্যাখ্যা না পেয়ে বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয়।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বুধবার বলেন, ‘শ্রীলঙ্কাই শুরু করেছে। এরপর আমাদের কর্তৃপক্ষ একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

কলম্বো গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব (বাইলেটারাল অ্যান্ড কনস্যুলার) কামরুল আহসান কলম্বোর আকস্মিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঢাকার হতাশার কথা প্রকাশ করে ব্যাখ্যা জানতে চান শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনারের কাছে।  

পরে গুনাসাকেরা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি নিজেও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। কলম্বোতে পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি এ বিষয়ে বলতে পারবেন, বলা হয় প্রতিবেদনে।

শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন দফতরের ভিসা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা দপ্তরের নিয়ন্ত্রক মাদুমা বান্দারাকে উদ্ধৃত করে হিরু নিউজ নামে একটি ইংরেজি নিউজ পোর্টালের খবরে বলা হয়, ‘আইএস জঙ্গিদের প্রবেশ ঠেকাতে’ কলম্বো কয়েকটি দেশের নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

শ্রীলঙ্কা অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া বন্ধ রাখলেও দেশটির রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান পরিবহন সংস্থা মিহিন লঙ্কা বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নেয়া অব্যাহত রাখলে কলম্বো বিমানবন্দরে নেমে হয়রানির শিকার হতে হয় বাংলাদেশি যাত্রীদের।

সার্কের সদস্য বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু ১৯৭২ সালে। বিআইএমএসটিইসি, আইওআরএ এবং এশিয়া কো-অপারেশন ডায়লগে সদস্য হিসেবে রয়েছে দুই দেশই। বাণিজ্য ও কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং, ব্যাংকিং, ওষুধ শিল্প, তথ্য-প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে শ্রীলঙ্কার প্রায় দশ হাজার কর্মী কাজ করছেন বলে সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। দেশটিতে সাম্প্রতিক বন্যার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ত্রাণও পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার সেনা সদস্যদেরও দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন