• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
জাতীয় নির্বাচন

৯০ দিন ঘিরেই আ.লীগের যত কৌশল


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৪:১৭ পিএম
৯০ দিন ঘিরেই আ.লীগের যত কৌশল

ঢাকা: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আপাতত দুটি কৌশলে আওয়ামী লীগ এগোতে চাইছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা সংবিধান মেনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন করবে। তবে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের আন্দোলনের বিষয় মাথায় রেখে একটু কৌশলী হচ্ছে। সংবিধানে সরকারের মেয়াদ শেষের আগে অথবা পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এটিকেই কাজে লাগাতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলটির একটি সূত্র জানায়, তারা এমন সময়কে বেছে নিতে চান, যখন মানুষের আবেগ বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কাজ করবে, স্বতঃফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এটি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরও হতে পারে।

দলটির নেতারা বলছেন, আগাম বা দেরিতে নয়, আওয়ামী লীগের সুবিধামত সময়ে নির্বাচন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বিএনপিসহ বিরোধী জোট আন্দোলন করে সেই নির্বাচন বানচাল করতে সমর্থ হলেও যেন কোনো সমস্যা না হয়, সংবিধান সমুন্নত থাকে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আরেকটি তফসিলের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। আর সেভাবেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে জোটের হিসাব-নিকাশ ও প্রভাবশালী প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব নেই এমন আসনগুলোর নির্বাচনী মাঠ গোছাতে অনেককে সবুজ সংকেত দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

গত ২৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার‌্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন।

এসময় ওবায়দুল কাদের যুগ্ম সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে জানতে চান, যদি আগামী বছরের মার্চে নির্বাচন করতে হয়, সেক্ষেত্রে দল প্রস্তুত কিনা? জবাবে যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা জানান, সারাদেশেই দলের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত রয়েছে। মার্চে নির্বাচন হলে তাতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েই অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে। এরপরই ওই বৈঠকে যুগ্ম সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্বাচনী কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করার জন্য নির্দেশ দিয়ে জেলা-উপজেলা নেতাদের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবরও হয়েছে। এরপরই কম্বোডিয়া সফর শেষে ৭ ডিসেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাম নির্বাচনের বিষয়টি নাকচ করে দেন।

দলীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া দলীয় ফোরামে কেন এই আলোচনা উঠলো- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা অংশগ্রণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জয় চান। উন্নয়নের প্রচার করে মানুষের মধ্যে একটা ইতিবাচক সাড়া এনে, দেশি-বিদেশি চাপ সামলে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটে বিজয়ী হওয়ার মত অবস্থা তৈরি করেই নির্বাচন দেবেন। এজন্য তারা এমন সময়কে বেছে নিতে চান, যখন মানুষের আবেগ বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কাজ করবে, স্বতঃফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এটি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরও হতে পারে।

দলটির নেতারা মনে করেন, সামনে তাদের দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। এক. গত ৯ বছরের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ প্রচার করে মানুষের সমর্থন কুড়ানো। দুই. বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী জোটের আন্দোলন দমন করে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। এই দুটি চ্যালেঞ্জ ঠান্ডা মাথায় মোকাবেলা করে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা। আর এজন্য সংবিধান সমুন্নত রেখে নিজেদের মত করে নির্বাচনের একটা সময় ঠিক করতে চাইছেন তারা।

বিএনপির বয়কটের পরও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সরকার গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২৯ জানুয়ারি। সে অনুযায়ী, এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সালে। সংবিধান অনুযায়ী, সরকার চাইলে তাদের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে অথবা পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারবে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের সুবিধামত সময়ে নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন আগাম বা দেরিতে হবে না, সংবিধান অনুযায়ী সুবিধামত সময়ে হবে। মাঠ যখন নিজেদের অনুকূলে থাকবে, তখনই নির্বাচন দেওয়া হবে। ক্ষমতাসীন হিসেবে আওয়ামী লীগ এই সুবিধা পেতেই পারে। তবে কিছুটা সময় হাতে রেখে নির্বাচন দেওয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অক্টোবর জানুয়ারি, স্বাভাবিক যে সময় আছে, এর মধ্যে সুবিধামত সময়ে নির্বাচন হবে। আগাম বা দেরি করার সুযোগ নেই। তবে এক তফসিল বাতিল হলে পুনঃতফসিলের (রি-শিডিউল) মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনার কথা তিনি না বলে নিশ্চিত করেন।

এছাড়া জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, সংবিধান মেনে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে সংবিধানে বর্ণিত সরকার গঠন হবে। আর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করবে। কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার তাদের সহযোগিতা করবে।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!