• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসার অবেহলায় গর্ভশিশুর মৃত্যু, পাগলপ্রায় দম্পতি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৪, ২০১৭, ১১:৪০ পিএম
চিকিৎসার অবেহলায় গর্ভশিশুর মৃত্যু, পাগলপ্রায় দম্পতি

ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত হাসপাতাল স্কয়ারে চিকিৎসা অবহেলায় ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই এক গর্ভশিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিজাত পরিবারের এক দম্পতি।

অভিযোগ উঠেছে, গর্ভকালীন ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছার পরও সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে বিনা চিকিৎসায় রাখা হয় ওই গর্ভবতীকে। পরে কিছু ইনজেকশন ও ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়। এতে সেই গর্ভবতীর চেহারায় ফুটে উঠে দীর্ঘ পরিশ্রমের ধকল। চোখ ও মুখের চারপাশ ফুলে যায়।

গেল ৭ মে হাসপাতালে ভর্তি করার পরদিন ৮ মে সকালে গর্ভে থাকা অবস্থাতেই মৃত্যু হয় শিশুটির। এ ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে আনিকা রহমান ও জাহিদ দম্পতির পরিবার থেকে।

অভিযোগ করা হয়েছে, গত ৭ মে আনিকা রহমানের গর্ভকালীন ব্যথা উঠলে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রীর নিয়মিত চিকিৎসক স্কয়ার হাসপাতালের ডা. কাজী শামছুন নাহারের কাছে নিয়ে যান জাহিদ। আনিকাকে তাৎক্ষণিক স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন ডা. শামছুন নাহার।

জাহিদ জানান, ওই চিকিৎসক তাদের বলেছেন তার স্ত্রীর প্রি-ম্যাচিউরড ডেলিভারি ব্যথা হচ্ছে। তখনই ব্যথা বন্ধ করতে হবে। না হলে মা ও শিশু দু’জনেরই বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

সকালে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আনিকাকে লেবার ইউনিটে শুইয়ে রাখলেও ডা. নাহার তাকে দেখতে যান প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রাত নয়টার দিকে। ওই সময়ের মধ্যে আনিকাকে বিভিন্ন রকম ইনজেকশন ও ঔষধ দেয়া হয়।

রাত দশটার পর ওই চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের জানিয়েছিলেন, মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ আছে। পরের দিন অর্থ্যাৎ ৮ মে তাদের কেবিনে দেয়ার কথা বলে যান।

জাহিদ সাংবাদিকদের জানান, পরদিন ৮ মে বেলা ১১টায় জাহিদ ও তার আইনজীবী মা হাসপাতালে গেলে ডা. শামসুন নাহার তাদের জানান আনিকার গর্ভের শিশুটি মারা গেছে। তিনি আরো জানান, গর্ভে শিশুটি একেবারেই প্রাথমিক অবস্থায় ছিল। ওজন ছিল মাত্র ৯০০ গ্রাম। গলায় কর্ড (নাঁড়ি) পেঁচিয়ে যাওয়ায় শিশুটি মারা গেছে বলে নিশ্চিতভাবে জানিয়ে দেন ডা. শামসুন নাহার।

পরে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে স্বাভাবিকভাবে ডেলিভারি করানোর জন্য বিভিন্ন রকম ঔষধ প্রয়োগ করেন আনিকার ওপর। এর কয়েক ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মৃত বাচ্চা প্রসব করেন আনিকা। একটি শপিং ব্যাগে ভরে শিশুটিকে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয় রাত ৮টার দিকে।

চিকিৎসা ব্যবস্থায় সে সব অসঙ্গত তথ্য দেখা গেছে, তা হলো- ডেথ সার্টিফিকেটে শিশুটির ওজন ২ কেজি (২০০০ গ্রাম) লেখা হয়। অথচ চিকিৎসক বলেছিলেন শিশুর ওজন ছিল ৯০০ গ্রাম। গর্ভকালীন বয়স লেখা হয় ২৮ সপ্তাহের বেশি। অথচ ৮ মের আল্ট্রাসাউন্ড (টু-ডি) রিপোর্টে লেখা ২৭ সপ্তাহ ২ দিন।

লেবার ইউনিটে আনিকাকে কী কী ওষুধ দেয়া হয়েছে তার কোনো তালিকা হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। রাতে মা ও শিশু দু’জনই ভালো থাকলেও পরের দিন জানানো হয় শিশু মারা গেছে। এই সময়ের মধ্যে রোগীর কোনো শারীরিক সমস্যা হয়নি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

জাহিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘স্কয়ার হাসপাতালে স্ত্রীকে ভর্তি করার পরে মোটা অঙ্কের অর্থ নিলেও আমার স্ত্রীকে গুরুত্ব দিয়ে কোনো চিকিৎসাই করেনি তারা । ডাক্তার ও হাসপাতালের অবহেলায় জন্মের আগেই আমার ৩০ সপ্তাহ বয়সী ছেলেটি মারা গিয়েছে। তারা আমার গর্ভবতী স্ত্রীর বিষয়ে সিরিয়াস ছিলেন না। অথচ গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে স্কয়ার হাসপাতালেই ডা. নাহারের অধীনে আনিকার নিয়মিত চেক-আপ করে আসছি। আমি এ বিষয়ে ডা. নাহারের সঙ্গে কথা বললেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। স্কয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সিকিউরিটি গার্ডরা আমাদের ঘিরে রাখে। পরে বাইরে বের হয়ে আসি।’

সঙ্গে সঙ্গে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে চিকিৎসা শুরু করলে হয়তো ছেলেকে বাঁচানো যেত বলে অভিযোগ করেন জাহিদ।

প্রসঙ্গত, স্কয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে তাদের উদাসীনতার জন্য বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার মৃত্যু হয়েছে এ হাসপাতালটিতে। তখন তানিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, হাসপাতালটির চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণেই তাদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। নিহত তানিয়ার বাবাও একজন চিকিৎসক।

২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এ এস এম জাকারিয়া স্বপনকে স্কয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। তার কোমো থেরাপির জন্য ভেজাল ওষুধ ব্যবহার করেছিল স্কায়ার হাসপাতাল। এঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারক।

অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা.কাজী শামছুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে হাসপাতালে মুখোমুখি কথা বলার জন্য রাজি হন।

এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে পরিচালক পর্যায়ের একজন জানান, আমরা এ বিষয়ে এখন কোনো কথা বলবো না। আমরা তদন্ত করে দেখছি। ২০ মে তদন্ত রিপোর্ট এলে মিডিয়াকে জানাতে পারবো।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব 

Wordbridge School
Link copied!