• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

আইভী কীভাবে পেলেন মনোনয়ন? 


মেহেদী হাসান নভেম্বর ২০, ২০১৬, ০৭:৫০ পিএম
আইভী কীভাবে পেলেন মনোনয়ন? 

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে কাজ করেছে পাঁচটি কারণ। সেসব কারণ এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তৃণমূল সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আর সে কারণেই ওসমান পরিবারের সিদ্ধান্তকে পরাজিত করে আইভী ছিনিয়ে নিয়েছেন নৌকা প্রতীক।

প্রশ্ন উঠেছে দলের সিদ্ধান্ত আর নেতাদের গণপদত্যাগের মতো আলটিমেটামকে উপেক্ষা করে কীভাবে আইভীকে দেয়া হয়েছে মনোনয়ন? এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

মূলত, গেল ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড নাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর জন্য বিবেচনায় নিয়েছিল পাঁচ বিষয়। এসব হচ্ছে জনপ্রিয়তা, বর্তমান মেয়র, নারী নেত্রী, নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা আর বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এসব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে আইভীর কোনো বিকল্প ছিল না। তাই কেন্দ্র থেকে আইভীকেই পছন্দ করা হয়।

সূত্রমতে, মনোনয়ন বোর্ডে থাকা সব সদস্য আইভীর পক্ষেই মত দিতে থাকেন। পরে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও আইভীকে সফল মেয়র হিসেবে উল্লেখ করে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।

মেধা, দক্ষতা ও রাজনৈতিক সফলতার দিক থেকে আইভী এগিয়ে রয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্তব্য সেখানে বলেন, আইভীকে মনোনয়ন দেয়া হলে বিজয় নিশ্চিত। এরপর একে একে সব সদস্য আইভীর পক্ষে বক্তব্য দেন। প্রায় সবার বক্তব্যে একটি কথাই উঠে আসে যে, বিএনপি নাসিক নির্বাচনে অংশ নেবে। সে ক্ষেত্রে জনপ্রিয় প্রার্থী ও নারায়ণগঞ্জবাসীর জনমতকে গুরুত্ব দিতে হবে। তারা আইভীর পক্ষেই রয়েছে। ফলে নারায়ণগঞ্জবাসীর জনমতকে উপেক্ষা করে অন্য কোনো প্রার্থী দেয়া হলে, ফল বিপর্যয় ঘটতে পারে।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, ‘বিভিন্ন রিপোর্টও আইভীর পক্ষে। তা ছাড়া, আইভী নারী হয়ে মেয়র হিসেবে যথেষ্ট ভালো চালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ।’

চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে যখন মনোনয়ন বোর্ড গণভবনে বৈঠক করছিল, তখন পাশের একটি রুমে অপেক্ষা করছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। বৈঠক শেষে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য সদস্যরা। শেখ হাসিনাকে যখন আইভী সালাম করছিলেন, তখন আইভীকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করতে হবে এবং নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।’

এ সময় শামীম ওসমানের বাসায় গিয়ে দেখা করার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের ঘরেও যাবে এবং মিলেমিশে নির্বাচন করবে।’

অন্য একটি সূত্র জানায়, আইভীর পক্ষে নির্বাচন করতে হবে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে। এমন বার্তা দেয়া হয়েছে যেমন আইভীকে, তেমনি শামীম ওসমানকেও কেন্দ্র থেকে এই বার্তা পাঠানো হচ্ছে। শামীম ওসমানের জন্য নাসিক নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষা।

জানতে চাইলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আইভীর জনপ্রিয়তা, নারায়ণগঞ্জবাসীর মতামত এবং সর্বোপরি নারী মেয়র হিসেবে আইভী ভালো করেছেন। এ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী হিসেবে আইভীকেই বেছে নিয়েছে।’

জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ডা. দীপু মনিও বলেন, ‘দক্ষতা, যোগ্যতা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা বিবেচনা করে আইভীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।’

এ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রতিক্রিয়া জানতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পরে আইভীর তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘আমি ভীষণ খুশি।’

এর আগে গত ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য আইভীকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রে পাঠানো হয় তিনজনের নাম। প্রস্তাবিত প্রার্থীরা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সভাপতি মজিবর রহমান এবং বন্দর থানা সভাপতি এম এ রশিদ।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জের প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ দলের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন আইভী। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। আর আইভি পেয়েছিলেন এক লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!