• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণের ভয়ে ভীত হাজারো রোহিঙ্গা শিশু


মুহিববুল্লাহ মুহিব নভেম্বর ২৬, ২০১৬, ১০:৫৯ এএম
প্রাণের ভয়ে ভীত হাজারো রোহিঙ্গা শিশু

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরাও। এই সহিংসতায় অনেক শিশুকে হারাতে হয়েছে তাদের বাবা-মা ও ভাই বোনদের। অন্যদিকে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের হারিয়ে পাগলপারা।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের শরীরে দেখা গেছে নির্যাতনের চিহ্ন, চোখে-মুখে অজানা আতঙ্ক। এই ক্যাম্পে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা অন্তত এক হাজারের মত শিশু রয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। তাদের মধ্যে কেউ মা-বাবার সঙ্গে এসেছে আবার অনেকে নিজের আত্মীয় স্বজনের সাথে আসছে বলে জানা গেছে।

তাদেরই একজন নূর সাহারা। নিজেকে প্রাণে বাঁচাতে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসা এই শিশু বাবা-মাকে হারিয়ে এখন নির্বাক।

সাহারাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী রশিদা বেগম বলেন, মিয়ানমারের সৈন্যরা তার বাবা আজিজুল হককে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে সে সময় রোহিঙ্গারা নিজেদের বাঁচাতে দিগ্বিদিক পালাতে থাকে। একপর্যায়ে সাহারার মা হারিয়ে যায়। আমরা গ্রাম ছেড়ে পালানোর সময় দেখি, সে কান্না-কাটি করছে। তাই তাকে আমাদের সাথে নিয়ে আসি। এরপর এখানেও সে কান্নাকাটি করছে।

রশিদা বেগম আরও জানান, সাহারা প্যান্ট-শার্ট ও জুতা পরা কাউকে দেখলে এখনও ভয় পায়। কারণ রাখাইন রাজ্যের সেই নির্মম নির্যাতনের চিত্র সে দেখেছে। বর্তমানে সাহারা টেকনাফের লেদা শরণার্থী ক্যাম্পে রয়েছে।

এদিকে যেই সন্তানদের প্রাণ বাঁচাতে পাড়ি দিয়েছিলেন নাফ নদী, তাদেরই নৌকাডুবিতে হারিয়েছেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নারী সুফিয়া খাতুন। তিন সন্তানকে হারিয়ে সে এখন পাগলপ্রায়।

সুফিয়া ও তার স্বামী সামরিক জান্তার নির্যাতন থেকে বাঁচতে তিন সন্তানকে নিয়ে পাড়ি দিচ্ছিলেন নাফ নদী। এই সময় মাঝপথে এসে নৌকাটি ডুবে যায়। নিজেরা অন্য নৌকার সাহায্যে পাড়ে উঠলেও হারিয়ে যায় তার তিন সন্তান। তাদের সাথে একই নৌকায় থাকা আরেক নারী আমিনা খাতুনের একমাত্র শিশু সন্তানও হারিয়ে নদীগর্ভে।

টেকনাফের ১৩ টি এবং উখিয়ার ৭টি পয়েন্ট দিয়ে বিজিবির চোখের আড়ালে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে প্রতিনিয়ত।

এদিকে বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সীমান্ত থেকে 'পুশব্যাক' অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। তবে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন অনুপ্রবেশ ঘটলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। কিছু পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করলেও তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে বিজিবি। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আগের চেয়ে তুলনামূলক কমে গেছে বলে জানান প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

এদিকে আজও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৪১ রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক লে: কর্নেল আবু জার আল জাহিদ। টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। তারা বলেন, সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে তারা সমর্থন করেন। তারা মনে করেন, মিয়ানমারও এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএম/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!