• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউ পার্লামেন্ট যেন ‘যৌনপল্লী’! 


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ২৫, ২০১৭, ১১:৪৬ এএম
ইইউ পার্লামেন্ট যেন ‘যৌনপল্লী’! 

ঢাকা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টকে যৌন হয়রানির আখড়া বলে অভিযোগ এনেছেন বেশ কয়েকজন নারী কর্মী। সেই সাথে পার্লামেন্টকে পুরুষ কর্মী ‘যৌনপল্লী’ বলে মনে করে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক নারী কর্মী।

দ্য সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হলিউড চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার এ খবর প্রচার হলো। হার্ভে ওয়েনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির কথা নারী অকপটে বলতে থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের নারী কর্মীরা যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ করলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্লামেন্ট সদস্যরা কৌশলে অধস্তন নারী সহকর্মীদের শরীরে, বুকে, পিঠে ও পেছনে হাত দেন। সাংসদেরা প্রভাবশালী হওয়ায় এবং চাকরি যাওয়ার ভয়ে হয়রানির শিকার নারীরা মুখ বুজে সব সহ্য করেন।

হয়রানির শিকার এক ইইউ পার্লামেন্টের চাকরি করা নারী জানান, ৬০ বছর বয়সী একজন পার্লামেন্ট সদস্য আমাকে একা পেয়ে লিফটে উঠে পড়েন। কিন্তু এরপরই তিনি আমাকে ছোঁয়া শুরু করলেন। তিনি আমার চুলে হাত বোলানো শুরু করেন। এরপর আমার ঘাড়, আমার পিঠে। আমি আতঙ্কে ঠাণ্ডা হয়ে গেলাম। ওই সময় আমার রীতিমতো শক্তি হরণ হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল।

ওই নারী বলেন, ঘটনাটি আমার সহকর্মীকে বলেছি। তিনি আমাকে বললেন, এটা নিয়ে অভিযোগ জানানো উচিত, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি তা করিনি। চাকরি হারানোর ভয়, অস্বস্তি এবং কর্মজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল আমার।

দুই সন্তানের বাবা ওই ব্যক্তি এখনো ইইউ পার্লামেন্টের সদস্য। তার লালসার শিকার শুধু ওই নারী হয়েছেন, এমন নয়; এক ডজনের বেশি অধীনস্থ নারী কর্মী ওই ব্যক্তির কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

হয়রানির কিছু কিছু ঘটনা ছিল ভয়ংকর। এক সদস্য তার অধীনস্থ এক নারী কর্মীর সামনেই হস্তমৈথুন শুরু করেন বলে অভিযোগ আছে।

২২ বছর বয়সী ওই নারীর দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট একটি ‘যৌন নির্যাতনের আখড়া’। কারণ, পার্লামেন্ট সদস্যরা ইচ্ছা করেই তরুণীদের অধস্তন সহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়। তাঁদের ভাবনাটাই এমন যে তাঁরা (পার্লামেন্ট সদস্যরা) কারও কাছে ‘দায়বদ্ধ নন’। পার্লামেন্ট সদস্যর হাতে যৌন হয়রানির শিকার অপর এক জুনিয়র অধস্তন কর্মীর অভিযোগ আরও ভয়াবহ।

২৪ বছর বয়সী অপর এক নারীও এমন ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, কনফারেন্স কক্ষে যাওয়ার পথে তার পথরোধ করা হয়। ওই পার্লামেন্ট সদস্য তার বুকে হাত দেন। পানীয় পানের প্রস্তাবও দেন। ওই নারী মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে যান।

এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ইইউ পার্লামেন্টের কাঠামোকে দায়ী করে নির্যাতনের শিকার নারীরা জানান, ঘৃণ্য উদ্দেশ্য নিয়েই সুন্দরী নারীদের সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের সাংসদেরা। এরপর নানা ছলে তাদের শরীরে হাত দেয়া থেকে শুরু করে জোর করে বাধ্য করা হয়। চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকেই মুখ বুজে সহ্য করেন। তাই অবাধে চলছে এসব ঘটনা।

তারা আরো জানান, এসব বিষয়ে অভিযোগ করলেও প্রশাসনিক জটে তা আটকে থাকে। ফলে ন্যায্য বিচার পাওয়ার পথও কার্যত বন্ধ। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাব বিস্তার করে এসব মামলা ধামাচাপা দিয়ে দেন। এমন পরিস্থিতিতে অভিযোগ জানানোর সাহস হারিয়ে ফেলছেন অনেকে। অনেক সময় অপর পুরুষ সহকর্মীরাও বিষয়টি জানার পর মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের যৌন হয়রানিবিরোধী কমিটির সদস্য হলেন ক্যাথরিন বেয়ার্ডার বলেন, এ ব্যাপারটি শোনা এবং এটা নিয়ে কথা বলা খুব কঠিন কাজ। কারণ বন্ধ অফিস কক্ষের ঘটনার অভিযোগের কথা শোনা বেশ কঠিন। কেউ যখন আপনার চেয়ে ক্ষমতাশালী হন, তখন ভাবেন যে আপনি সুন্দরী ও আত্মবিশ্বাসী হলেও আর্থিকভাবে এবং অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে তারা তা পেরিয়ে যাবেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!