• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার অনুপস্থিতিতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বিএনপির


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১, ২০১৯, ০২:৩৬ পিএম
খালেদার অনুপস্থিতিতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বিএনপির

ঢাকা : সন্দেহ-অবিশ্বাসের সাগরে ভাসছে বিএনপি। এ সন্দেহ দলটির নেতাদের পরস্পরের মধ্যে। দিন যত যাচ্ছে এই সন্দেহ-অবিশ্বাসের দেয়াল আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, ধারণ করছে ভয়াবহ রূপ। আগে বিষোদ্গার ছিল আড়ালে-আবডালে, এখন চলছে প্রকাশ্যে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস পার হলেও দৃশ্যমান বা কার্যকর কোনো উদ্যোগ বা ভবিষ্যৎ রাজনীতির কোনো ছক আঁকতে পারেননি দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। উল্টো উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে গণহারে বহিষ্কারের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।

বিএনপির বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে দল পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রভাবশালী দুই নেতার বক্তব্য নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেই থেকে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামে ফাটল ধরে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী ওই দুই নেতাকে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। অপরদিকে স্থগিত হয়ে যায় দলের আসন্ন কাউন্সিলের আলোচনাও।

সংসদ নির্বাচনের পর দলটির বিপর্যস্ত সাংগঠনিক কাঠামো ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সিদ্ধান্ত কাগজেই আটকা পড়ে আছে। অঙ্গ-সংগঠনগুলো হালনাগাদ করা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সারা দেশে লাখো নেতাকর্মীকে পরিচালনার জন্য ১০টি বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হলেও তাদের কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান নয়। নানা কারণে বিপর্যস্ত নেতাকর্মীদের আশাব্যঞ্জক কোনো কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি দলটি। অথচ উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তৃণমূলের শতশত নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এতে তৃণমূলে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে কেন্দ্রের নীরবতাকে ইস্যু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতাদের মুখোমুখি অবস্থান নেন। গত রোববার এক অনুষ্ঠানে মহাসচিবের কাছে এর জবাবদিহিও চান তৃণমূলের নেতারা।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সন্দেহ-অবিশ্বাসের বিষয়টি সামনে এসেছে সম্প্রতি দুটি অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক অনশনের কর্মসূচিতে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা মামলা মোকদ্দমায় ভয় পান তারা দয়া করে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। যারা ভয় পাবেন না তারা দায়িত্ব পালন করবেন। পৃথক সভায় বিল্পবী বক্তব্যে দেওয়া কয়েকজন নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন অনেকে অনেক কথা বলছেন। নেত্রীর গ্রেফতারের পর কর্মসূচিতে কতজন এসেছেন? কতজন আসেননি, কারা কারা সেই কর্মসূচির মধ্য থেকে আস্তে আস্তে চলে গেছেন তা দেখা গেছে। নির্বাচনের মধ্যে কারা বেরিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন, প্রতিবাদ করেননি সেটাও দেখা গেছে। শুধু আবদ্ধ ঘরে নিরাপদ জায়গায় কথা বলে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে না।

এর আগে নির্বাচনের সময় দলের এক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ফোনালাপকে কেন্দ্র করে সন্দেহ অঙ্কুরিত হয়। নানা ঘটনা যুক্ত হয়ে তা বটবৃক্ষে রূপ নিয়েছে।

দলটির নেতাদের মন্তব্য, কেন্দ্রীয় নেতাদের মতানৈক্যের প্রভাব পড়েছে তৃণমূলেও। গত সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর শীর্ষ নেতারা সংগঠনকে ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে দলাদলিতে জড়িয়ে পড়ায় হতাশ তৃণমূল।

এদিকে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে দলের চেইন অব কমান্ড। কেউ কাউকে মানতে চাচ্ছে না। সুযোগ পেলেই প্রশ্নও করছেন- খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কী করছে? ঐক্যফ্রন্টকে কেন এখনো প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এবং বিপর্যস্ত তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে দল কেন দাঁড়াচ্ছে না?   

তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলীয় কর্মকাণ্ড না থাকায় নিজেদের সুযোগ-সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত। নিজের পদ পেতে, অনুসারীদের পদ দিতেই বেশি তৎপর তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে টকশো আর নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেকটা আয়েশিভাবে সময় পার করছেন। দল ক্ষমতায় থাকাকালে যারা মন্ত্রী-এমপি হয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন দল ও তৃণমূল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকছেন। যত ঝড় যাচ্ছে তৃণমূলে। কেন্দ্রীয় নেতারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অতীতে নীতিনির্ধারকদের ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ নেতাকর্মীকে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে তৃণমূল নেতারাকর্মীদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু রাজধানীতে থাকা নেতাদের ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়। এরপর থেকে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলের ছড়াছড়ি। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। দলের অনেক নেতার গাড়ি-বাড়ি, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে আপন গতিতে। আবার কারো কারো ব্যবসায় লালবাতি জ্বলছে। ঘটনার একপর্যায়ে ডানে-বামে আলোচনা-সমালোচনার ডালপালা গজাচ্ছে, কারো কারো বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কথাও বাতাসে ভাসছে।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে সময় পার করছে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়াকে বেআইনি ও অন্যায়ভাবে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গায়েবি মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এরপরও বিএনপি এখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবেই আছে। অটুট ও ভালো আছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা করতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!