• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

অভাবকে শক্তিতে রূপান্তর করে ঢাবি-রাবিতে বৃষ্টির চান্স 


ফরিদপুর প্রতিনিধি নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৫:৫১ পিএম
অভাবকে শক্তিতে রূপান্তর করে ঢাবি-রাবিতে বৃষ্টির চান্স 

ছবি : বৃষ্টি সরকার

ফরিদপুর : অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাইতো ক্লাস ওয়ান থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত—চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি বৃষ্টি সরকারের। কখনও চৌকি আবার কখনও মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। তারপরও দমে যাননি বৃষ্টি। দরিদ্রকে হার মানিয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি। বৃষ্টি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

ফরিদপুর শহরের রথখোলা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস বৃষ্টি সরকারের পরিবারের। তাদের মূল বাড়ি মাগুরা জেলার বাবুকালী ইউনিয়নের ধুলজোড়া-ডুমুরশিয়া গ্রামে। কিন্তু সেখানে শুধু ভিটেটুকু আছে, ঘরবাড়ি নেই। এ কারণে সেখানে যাওয়া-আসা নেই।

বাবা বিশ্বজিৎ সরকার ফরিদপুর শহরের একটি চালের দোকানের সাধারণ কর্মচারী। মহাজনের কাছ থেকে যে মাইনে পান তা দিয়ে চলে পরিবারের চারজনের পেটের খোরাক। মা গীতা রানী দর্জির কাজ করেন। এ থেকে যা আয় করেন তা দিয়েই চলে বৃষ্টির পড়ালেখার খরচ। ছোট বোন বর্ণিতা স্থানীয় স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানাটানির সংসারে তিনবেলা খাবারই জোটে না। তারপর আবার পড়ালেখার খরচ। টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়াতো দূরের কথা; বাড়িতে বসে পড়াশোনার পরিবেশও ছিল না। পড়ার টেবিল-চেয়ারও নেই। তাই চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ার সৌভাগ্যও হয়ে ওঠেনি বৃষ্টির। কখনও চৌকিতে কখনও মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। তবে এতকিছুর পরও পরিবারকে হতাশ করেননি বৃষ্টি। তিনি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

বৃষ্টি সরকারের মা গীতা রানী বলেন, ‘আমার মেয়ে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ ইউনিটে ভর্তি হবে। ভবিষ্যতে সে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে চায়।’

বৃষ্টি সরকার সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে এবং ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এইচএসসি পাসের পর তাকে স্থানীয় তুষার’স কেয়ার নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান মা গীতা রানী।

বৃষ্টি সরকার বলেন, মায়ের অনুপ্রেরণা, শিক্ষকদের উৎসাহ ও এক বান্ধবীর একান্ত সহযোগিতায় আজ আমি এ পর্যন্ত এসেছি। সাফল্যের গল্প ও স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেন, টাকার অভাবে প্রাইভেট-কোচিংয়ে পড়া হয়নি। আমার একটি পড়ার টেবিলও নেই। কিন্তু আমি সবসময়ই পড়তাম। রাত ২টা পর্যন্ত পড়েছি। আবার ভোর ৬টায় মা জাগিয়ে দিতেন।

বৃষ্টি আরও বলেন, পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অভাব কোনো বাধা নয়। শিক্ষকদের কাছ থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। এজন্য আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।

‘আমি ভবিষ্যতে আমার স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাই, দেশ ও দশের মান রাখতে চাই’—বলে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন বৃষ্টি।

সোনালীনিউজ/এমএস

Wordbridge School
Link copied!