• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

জীবিকার জন্য নৌকাতেই তাদের জীবন-যাপন


মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম
জীবিকার জন্য নৌকাতেই তাদের জীবন-যাপন

মানিকগঞ্জ : কুয়াশা মুড়ানো ভোড়ে ঘুম থেকে উঠে পদ্মা নদীর জেগে ওঠা চরে বসে চুলায় রান্না করছেন ফরহাদ মন্ডল (৪০)। রান্নার তালিকায় আছে পদ্মা নদী থেকে নিজ হাতে ধরা মাছে সঙ্গে আলু বেগুন দিয়ে তা ঝোল হবে। রান্না শেষে খাওয়া-দাওয়া করে সারা দিন নদীতে মাছ ধরবেন জেলে ফরহাদ মন্ডল ও তাদের সঙ্গীরা।

এভাবেই সকাল শুরু হয় পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতনাড়িয়া গ্রামের ফরহাদ হোসেন ও তার সঙ্গীদের। তারা সারা বছর পদ্মা নদীতেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এখন সবাই মাছ ধরতে অবস্থান করছেন মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক জেগে ওঠা নতুন চরে।

জীবিকার তাগিদে পরিবার ছেড়ে তাঁরা নৌকায় বিকল্প সংসার পেতেছেন। তারা ৬ জনই পাবনা জেলা থেকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের পদ্মায় এসে মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছেন। এরা মাঝেমধ্যে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সংসারের খরচের টাকা দিয়ে আবার নৌকায় ফিরে আসেন।

তাদের নৌকায় হাঁড়ি, পাতিল, মাটির চুলা, জ্বালানিকাঠসহ কাঁথা-বালিশ ছাড়াও প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র থাকে। রাতে বৃষ্টির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে জেলেরা নৌকায় মোটা পলিথিন মুড়িয়ে দেন। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ও কয়েল ব্যবহার করেন। একেকটি নৌকায় সাধারণত দুই থেকে তিনজন মানুষ থাকতে পারেন।

সম্প্রতি হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক পদ্মায় নতুন জেগে ওঠা চরে গিয়ে ফরহাদ মন্ডল, নবীন, রাজু মন্ডল, রব্বুল মন্ডল, এনামুল খা ও নীলচাদ মন্ডলসহ জেলেদের সঙ্গে কথা হয় তাদের সংগ্রামী জীবন নিয়ে।

জেলেরা বলেন, নদীর গতিপ্রকৃতির ভিন্নতার কারণে পদ্মা নদীতে আইড়, পাঙাশ, ইলিশ, বড় চিংড়ি, বাইম, বেলে (বাইলা), পোয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। এ নদীর মাছের স্বাদও অতুলনীয়। তাই ক্রেতাদের কাছে পদ্মার মাছের কদর বেশি। নদী থেকে ধরা মাছ প্রতিদিন আন্ধারমানিক বাজারে সকাল-বিকেল দুই বেলায় বিক্রি করা হয়।

ফরহাদ মন্ডল (৪০) বলেন, ‘নদী, নৌকা আর জালের মধ্যেই আমাদের জীবন চলে। সারাবছরই আমরা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালায় শুধু যখন মাছ ধরা নিষেধ থাকে তখন বাড়ি বসে থাকতে হয়।

তিনি আরো বলেন, সারা বছর নৌকা ও জাল মেরামত ও যাবতীয় খরচ বাদেও ভালোই রোজগার হয়। এক মেয়া (মেয়ে) এক পোলারে (ছেলে) নিয়া ভালোই আছি। বউ বাড়িতেই কাম কাইজ করে। এই মাছ ধইরেই মেয়াডারে (মেয়ে) বিয়া দিছি ছোট পুলাডাও (ছেলে) সিক্সে (৬ষ্ঠ শ্রেনী) পড়ে।

জেলে রাজু মন্ডল (৩০) বলেন, সারাবছর এই মাছ ধইরাই আমাগো সংসার চলে। প্রতিদিন চাইস্সো (চার শত) পাস্সো (পাঁচ শত) কত দিন আসটোসোও (আট শত) কামাই করি। এই নিয়ে ভালো আছি ভাই।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!