• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরিষার বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি


গাজীপুর প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩, ১২:২৯ পিএম
সরিষার বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবার কম খরচে ফসলের মাঠে সরিষার উচ্চ ফলন দেখে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ ফুটে উঠেছে উপজেলার সরিষা চাষি কৃষকদের মাঝে। 

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী শ্রীপুর উপজেলার মাওনা, তেলিহাটি, বরমী, কাওরাইদ, গোসিংগা, রাজাবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষের নয়ানাবিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময়ে সোনালীনিউজ এর সঙ্গে কথা হয়েছে মাওনা গ্রামের সরিষা চাষি জুলফিকার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার কম খরচে অনেক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেন তিনি। তবে এবার আড়াই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার সরিষার উচ্চ ফলন হয়েছে। নিজের প্রয়োজন মিটিয়েও ১২-১৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন তিনি। এই কৃষক বলেন, এবার আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করায় উপজেলার সকল চাষিদের সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। এ জন্য নতুন যারা সরিষা চাষ করেছেন এমন কৃষক পরিবারের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ দেখা যাচ্ছে। 

এ দিকে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে আবাদ হয়েছে ২১২ হেক্টর জমিতে। মাঠের পর মাঠ চোখ ধাঁধানো হলুদ ফুলের সমাহার উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এমন সৌন্দর্য শোভা পাচ্ছে। 

এ শিল্পাঞ্চলের কৃষকরা জানিয়েছেন, খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় দিন-দিন পুরাতন চাষিদের পাশাপাশি নতুন কৃষকদের সরিষা চাষাবাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষা চাষ। প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি-১৪ ও বারি-১৫ ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। 

অপর দিকে শ্রীপুর উপজেলার অর্ধশতাধিক এলাকার কৃষকরা সোনালীনিউজকে জানিয়েছেন, তাদের ধান চাষের পরেই যে ফসল চাষাবাদ করা হয়। সেই ফসলের নামই সরিষার চাষ। এজন্য উপজেলার বিভিন্ন মাঠে চাষ হয়েছে উন্নত জাতের সরিষা বারি-১৪ ও বারি-১৫। গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে ২ ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এ সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়। এ শিল্পাঞ্চলের কৃষকরা এখন সরিষা চাষাবাদে দিন-দিন পাঁকা চাষী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে শ্রীপুরে সরিষা এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা আরও যদি কৃষকদের সরিষা চাষাবাদের প্রতি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে। তাহলে এ শিল্পাঞ্চলের সরিষা চাষের বিপ্লব ঘটবে। 

মাওনা গ্রামের সরিষাচাষি আব্দুল হেকিম জানান, শ্রীপুরে একটা সময়ে সরিষা চাষাবাদে কৃষকদের তেমন কোন আগ্রহ ছিলোনা। তবে যখন কৃষকরা প্রথমবার চাষ করেই বুঝতে পারলো কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জিত হয়। তখন থেকেই এ শিল্পাঞ্চলে সরিষা চাষাবাদের কৃষকদের আগ্রহ বাড়তে শুরু হয়। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে যেমন সেচের প্রয়োজন হয় না

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, শ্রীপুরের কৃষকরা সরিষা চাষাবাদে প্রথম দিকে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে তারা যখন দেখলেন। স্বল্প খবর দিয়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদন করা যায়। এর পর থেকেই তারা সরিষা চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উপজেলার অনেক নতুন কৃষকরাও সরিষা চাষাবাদ শুরু করেছে। 

তিনি বলেন,উন্নত জাত যেমন বারি-১৪, বারি-১৫ জাতের সরিষার চাষ হচ্ছে। তৈল জাতীয় ফসলের ৪০ শতাংশ আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩ বছরের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ বিতরণ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অব্যাহত থাকবে। কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের কৃষকদের পাশাপাশি এখন শিক্ষত যুবকরাও নতুন নতুন ফসল চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটা কৃষি শিল্প সম্প্রসারণকে আরও সমৃদ্ধ করবে। 

সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই

Wordbridge School
Link copied!