• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩০

বরিশালে আমেরিকান ক্যাপসিকাম চাষে বিপুল সম্ভাবনা  


বরিশাল প্রতিনিধি  ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
বরিশালে আমেরিকান ক্যাপসিকাম চাষে বিপুল সম্ভাবনা  

বরিশাল: যা এক সময় শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল, সেখানে এখন নতুন একটি কৃষিপণ্যের সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। আমেরিকার আদি সবজি ক্যাপসিকাম (মিষ্টি মরিচ) এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে বরিশালের কিছু চর ও চরে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য নতুন এক অর্থনৈতিক দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ৭৬ হেক্টর জমিতে ১,৩৫৩ মেট্রিক টন ক্যাপসিকাম উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২ হেক্টর এবং ভোলায় ৭৪ হেক্টর জমিতে এই ফসল চাষ হচ্ছে। গড়ে প্রতি হেক্টরে ৭.৮০ মেট্রিক টন ফলন হচ্ছে। তবে শুধু এই দুটি জেলায় নয়, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা জেলাতেও উৎপাদন শুরু হয়েছে, যা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

সরেজমিনে বরিশাল সদর উপজেলার লড়াইপুর চর ঘুরে দেখা গেছে, এখানে শীতকালীন সবজি, তরমুজ ও অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ক্যাপসিকামের চাষও হচ্ছে। কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন এবং তাদের জমিতে দুইবার ফসল সংগ্রহও করা হচ্ছে।

কৃষক মো. ইব্রাহিম বলেন, ভোলাতে আমি ক্যাপসিকামের চাষ করছি প্রায় ১২ বছর ধরে। ক্যাপসিকাম চরে ভালো ফলন দেয়, গাছগুলো ছোট হলেও রোদে ভালো হয় এবং প্রচুর পানি সরবরাহের সুবিধা এখানে পাওয়া যায়।

কিন্তু চাষিরা জানান, ক্যাপসিকাম চাষ বেশ ব্যয়বহুল। এক কেজি বীজ কিনতে ২-৩ লাখ টাকা খরচ হয়, এবং প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। চাষি মুনছের মিয়া বলেন, বাজারে দাম ভালো পেলে ক্যাপসিকাম চাষে আরও লাভবান হওয়া যেতো।

কৃষক আল আমিনও সরকারি সহায়তার অভাবের কথা জানালেন, সরকার যদি আমাদের বীজ দিতো অথবা স্বল্প সুদে ঋণ দিতো, তবে কৃষকরা টিকে থাকতে পারতো। বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় আমরা প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায় আড়তে বিক্রি করি, কিন্তু বাজারে তা দেড়শ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়।

তবে, আশার কথা হলো যে, ক্যাপসিকাম চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা দ্রুত বাজারে বিক্রি করতে পারছেন এবং ভাল ফলন পাচ্ছেন। পটুয়াখালীর চাষি আবু সর্দার জানান, তরমুজ-বাঙ্গির চেয়ে ক্যাপসিকামের বাজারে চাহিদা বেশি। আমি ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছি এবং চলতি বছরে লাভ হলে আগামী বছর আরও বাড়াবো।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ জিএমএম কবীর খান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে ক্যাপসিকাম চাষ আশাব্যাঞ্জক। আমরা চাষিদের সহায়তা করছি এবং পরামর্শ দিয়ে আরও সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করছি। সঠিক মূল্য পেলে ক্যাপসিকাম চাষ দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে।

এআর

Wordbridge School
Link copied!