• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

তালিকাভূক্ত কোম্পানির তথ্য প্রকাশে ডিএসইর নতুন সফটওয়্যার চালু


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৮, ২০২১, ০৬:১৬ পিএম
তালিকাভূক্ত কোম্পানির তথ্য প্রকাশে ডিএসইর নতুন সফটওয়্যার চালু

ফাইল ফটো

ঢাকা: ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ দর্শনের সাথে সঙ্গতি রেখে তালিকাভুক্তি এবং এর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্সের জন্য একটি সমন্বিত অনলাইন ডেটা সংগ্রহ, তথ্য জমা ও প্রচারের জন্য প্লাটফর্ম তৈরী করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই)। ‘ডিজিটাল সাবমিশন অ্যান্ড ডেসিমিনেশন প্লাটফর্ম অব ডিএসই’ নামের এই প্লাটফর্মটি আজ উদ্বোধন করা হয়েছে। যার ফলে এখন থেকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য অফিসে বসেই সফটওয়্যারে প্রকাশ করতে পারবে কোম্পানিগুলো।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ভার্চুয়ালি প্লাটফর্মটির উদ্বোধন করেন।

ডিএসইর এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অফিসে বসেই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই), আর্থিক হিসাব, উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ারধারন, ফ্রি ফ্লোট শেয়ার, শেয়ার গিফটসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য ডিএসইর সফটওয়্যারের মাধ্যমে জমা দিতে পারবে। যা ডিএসইর যাচাই শেষে অনুমোদনের পরে সবার জন্য প্রকাশ করা হবে। এছাড়া সফটওয়্যারে কোম্পানিগুলোর সব তথ্য আর্কাইভ আকারে জমা থাকবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, “এই সফটওয়্যারটির তথাকথিক কোন ডিজিটাল প্লাটফর্ম নয়, পার্টিকুলারলি সফটওয়্যারটি আমাদের ডিএসইর জন্য অনেক কাজে আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে সফটওয়্যার তৈরি করলেই হয়না, এটার সাফল্যও বয়ে আনতে হবে। এটার প্রতিনিয়ত আপডেট রাখতে হয়। আমি চাই ডিএসই যেন তাদের সফটওয়্যারটি সর্বদা আপডেট রাখতে পারে। আমাদের একটা বড় সমস্য হচ্ছে, আমরা খুবই ভালো উদ্যোগ নিতে পারি, কিন্তু তার রক্ষনাবেক্ষণে অনেক সমস্যা থেকে যায়।”

তিনি বলেন, “১৯৬৯ এর আইন দিয়ে পুঁজিবাজার পরিচালিত হয়। যেখানে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আইন আছে। যার মধ্যে তথ্যের বাধ্যবাধকতা একটি। পাশাপাশি তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার পরিহারের ব্যপারটিও উল্লেখ আছে। একইসঙ্গে গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়ও আছে। যে সমস্ত লিস্টেট কোম্পানি বিশ্বাস করে সফটওয়্যারে তথ্য দিবে তার তথ্যের গোপনীয়তা অবশ্যই ডিএসইকে রক্ষণ করতে হবে। এগুলো না মানলে আইনে শাস্তিরও ব্যবস্থা আছে। মৌলিকভালো কোন তথ্য বিভ্রাট হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এগুলো ডিএসইকে অবশ্যই মেইন্টেন করতে হবে।”

ভার্চুয়ালি প্লাটফর্মটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ

শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, “দেশের বড় বড় ও নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো লিস্টেট হতে চায়। এটা আমাদের কাম্য নয়। আমরা চাই সব ভালো কোম্পানিগুলো লিস্টেট হোক। এরা লিস্টেট না হওয়ার পিছনে কিছু কারণও আছে। এর মধ্যে একটা কারণ হলো লিস্টেট হওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি। যেমন-বার বার তথ্য নিয়ে বিএসইতে যাওয়া, ইত্যাদি। তবে নতুন এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই ভোগান্তি অনেকটা কমে আসবে। ফলে বড় ও নতুন প্রতিষ্টানগুলোও লিস্টেট হতে আগ্রহ হবে বলে মনে করছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের বিনিয়োগকারীরা এখন আগের থেকে অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নেয়। এটার একটা করাণ তথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি। আমরা যদি এই তথ্য প্রবাহ আরও বাড়াতে পারি তাহলে তারা আরও উপকৃত হবে। আমরা চাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সব সময় কাজ করতে, তারা যেন তথ্য পেয়ে ভালোভাবে বিনিয়োগ করতে পারে নিশ্চিত করেতে।” 

বিএসইসি’র কমিশনার বলেন, “আমরা দিন দিন ডিজিটালাইজেশনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ কোন নিছক স্বপ্ন না। এটি আসলে আমাদের একটি বাস্তবিক স্বপ্ন। এটি ছাড়া আমাদের ভবিষৎ উন্নয়ন সম্ভব না। আমরা যদি ডিজিটালাইজেশনের মাত্রায় আরও উন্নয়ন না করতে পারে তাহলে আমাদের অর্থনীতি ও সার্বিক উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রাখতে পারবো না।”

ভার্চুয়ালি প্লাটফর্মটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসইর সভাপতি মো. ইউনূসুর রহমানসহ অন্যান্যরা

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএসইর সভাপতি মো. ইউনূসুর রহমান বলেন, “আমাদের পুঁজিবাজারের ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে আজকে একটি মাইলফলক। দীর্ঘ ১ বছরেরও বেশি সময় কাজ করে আমাদের তরুন আইটি সেকশন একটা ভালো সফটওয়্যার উপহার দিয়েছে। এটির মাধ্যমে আমাদের ডিএসই একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছালো। ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে ‘ইনফর্মেশন সিস্টেম’ চালু করা হয়। এরই ধারবাহিকতায় আমরা এই নতুন সফটওয়্যারটি পেলাম।” 

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর। এর মধ্যে ৩৫ বছরই আমাদের কোন ভিশন-মিশন ছিলো না। ২০০৮ সালে আ. লীগ আসার পরই এই ভিশন-মিশন শুরু হলো। আর তখন থেকেই আমরা নতুন মাত্রায় এগিয়ে যেতে শুর করলাম। আমরা এখনো পুরোপুরি অটোমেশনে পৌঁছাতে পারি নি। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই পুরোপুরো অটোমেশনের দিকে পদর্পন করতে পারবো। আমরা খুব শিগরোই ডিএসইকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবো সেই বিশ্বাস রাখছি।”

ভার্চুয়ালি প্লাটফর্মটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসইর সিটিও মো. জুয়েল করিমসহ অন্যান্যরা

স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) মো. জুয়েল করিম বলেন, “সফটওয়্যারটি তৈরি করতে আমরা পেন্ডামিকে মোমেন্টেও কাজ করেছি। এটি একটি অত্যাধুনিক মডিউল। এ সফটওয়্যারের মধ্যমে কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারী অনেক বাড়ানো যাবে। চাইলেই আবার আমরা সফটওয়্যাটির পরিবর্তন আনতে পারবো, কেননা এটি আমাদের নিজস্বে আইটি তৈরি করেছে। আমি মনে করি এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্যাপিটাল মার্কেট অনেক এগিয়ে যাবে।” 

তিনি বলেন, “এই সফটওয়্যার চালুর ফলে কোন কোম্পানি তাদের রিপোর্ট না দিলে তার কাছে নোটিফিকেশন চলে যাবে। কেউ কর্পোরেট গভন্সেন্স না দিলে সেটাও নিশ্চিত করা সহজ হবে। মার্কেটকে কেউ ম্যানিপুলেট করলে সেটার বেলায়ও দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। আমি বিশ্বাস করি এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্যাপিটাল মার্টেক আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।”

ডিএসইর চিফ রেগুলটেরি অফিসার (বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত) এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আবদুল লতিফ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ করার যে উদ্যোগ, তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের ডিএসইতে এই ডিজিটালাইজেশন। আমরা খুবই দ্রুততার সঙ্গে ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমদের জন্য একটি খুশির বিষয় এই যে আমাদের পুরো মডিউলের কার্যক্রমই আমাদের নিজস্ব ডেভলোপার দিয়ে তৈরি হয়েছে। আমরা আজকে যে মডিউলটি উদ্বোধণ করতে যাচ্ছি। এটি অত্যান্ত শক্তিশালী একটি সফট্যয়ার। এটা পুঁজিবাজারকের অনেক গতিশীল করবে। ট্রান্সফারেন্সি ও সুসাশন নিশ্চিতেও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি।” 

প্রসঙ্গত, ডিএসই’র ডিজিটাল সাবমিশন অ্যান্ড ডেসিমিশন প্লাটফর্ম একটি স্বপ্ন ছিল। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ডিএসই’র দক্ষ কর্মী বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডেটা ইনপুট ও সাবমিশন অতি সহজে ও কম সময়ে করা যাবে। এই সফটওয়্যারটি ডিএসই’র নিজস্ব দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করেছে। যা বিদেশী নির্ভরতা কমানোর জন্য অগ্রণীভূমিকা পালন করবে। 

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Wordbridge School

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!