• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
অবরোধের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা

আনন্দের জায়গা নিয়েছে শঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৭, ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম
আনন্দের জায়গা নিয়েছে শঙ্কা

ঢাকা : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ বছর নভেম্বরের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা ছিল। সে লক্ষ্যে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা শুরু করে স্কুলগুলো। কিন্তু সে সময় থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। আসে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি। এতে স্কুলে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে।

সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক স্কুল তাদের সূচি সংশোধন করে শুক্র ও শনিবার পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে।

গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হরতাল-অবরোধ চললেও তা অনেকটা ঢিলেঢালা। রাস্তায় একাধিক গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়নি। ফলে স্কুলগুলো খোলা ছিল। শিক্ষার্থীরা ভীতি নিয়ে হলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তবে গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার পর কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচি আসার কথা শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আগামী রবি-সোমবার ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়েছে। এতে উৎকণ্ঠা আগের চেয়ে বেড়েছে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিরাপদে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে আকুতি জানিয়েছে। তারা তাদের স্কুলের সামনে হাতে লেখা পোস্টার বা স্কুলের দেওয়া ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছরের এই সময়ে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে হরতাল-অবরোধ বাচ্চাদের অনেকটা জিম্মি করার মতো। বাচ্চাদের সব সময়ই রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখা উচিত।’

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে-নিরাপদে পরীক্ষা দিতে চায়। আর তাদের এই সুযোগ দেওয়া সবার দায়িত্ব। যদি স্কুলগুলো শুক্র-শনিবার তাদের মতো করে পরীক্ষা নেয়, তাতে কোনো আপত্তি নেই। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আগামী রবিবার দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেটা একদিন এগিয়ে আগামী শনিবার নেওয়ার নতুন সূচি ঘোষণা করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। একইভাবে আগামী সোমবারের প্রথম ও নবম শ্রেণির পরীক্ষাও এগিয়ে আজ শুক্রবার নেওয়া হবে। তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়নের রুটিন অপরিবর্তিত থাকবে। তবে স্কুলটির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ২৪ নভেম্বর, শুক্রবার ও ২৫ নভেম্বর, শনিবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধূরী বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই আমাদের পরীক্ষা সূচিতে কিছুটা সংশোধন এনেছি। কারণ আমাদের অনেক শিক্ষার্থী দূর-দূরান্ত থেকে আসে। হরতাল-অবরোধের কারণে তাদের আসতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’ তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অনেক বেশি চাপ নিতে হবে। কারণ তাদের শুক্র-শনিবারসহ সপ্তাহের সাত দিনই স্কুলে আসতে হবে।

ভিকারুননিসার অভিভাবক আবদুল মজিদ সুজন বলেন, ‘প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এতে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে আতঙ্কে আছি। যাদের বাসা দূরে তাদের স্কুলে আসতে অনেক বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষাগুলো এগিয়ে বা পিছিয়ে শুক্র-শনিবারে নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তার খাতিরে তা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই।

জানা গেছে, বেশি আতঙ্কে আছেন নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কারণ অন্যান্য শ্রেণিতে স্কুলগুলো পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করছে। ফলে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি থাকলে সেটা নিজেরাই পরিবর্তন করে নিচ্ছে। কিন্তু মাউশি অধিদপ্তরের মাধ্যমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে এনসিটিবি। কিন্তু তারা এখনো তাদের সূচিতে পরিবর্তন আনেনি।

সূত্র জানায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রাথমিক মূল্যায়ন গত ৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়। যা কাল শনিবার পর্যন্ত চলবে। এরপর আগামী ১৯ নভেম্বর থেকে চূড়ান্ত মূল্যায়ন শুরু হবে, যা শেষ হবে আগামী ৩০ নভেম্বর। প্রায় প্রতিটি কর্মদিবসেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা রয়েছে। আর এই সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ভীত হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মফস্বল এলাকায় হরতাল-অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব নেই। ফলে গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরা অনেকটা নির্বিঘ্নেই স্কুলে যেতে পারছে। তবে সমস্যায় রয়েছে রাজধানী, বিভাগীয় শহর ও জেলা সদর এলাকায়। এসব এলাকায় যাদের বাড়ি স্কুলের কাছাকাছি তারা একটু ভীতি নিয়ে হলেও রিকশায় স্কুলে চলে আসতে পারছে। কিন্তু রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, গভর্মেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল, ধানমন্ডি গভর্মেন্ট বয়েজ স্কুলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। আর এসব অভিভাবকই বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।

শুধু স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাই নয়, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সমস্যায় পড়ছে। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হরতাল-অবরোধের কারণে অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। আর তারাও শুক্র-শনিবার পরীক্ষা রাখছে। শুধু ছুটির দিনগুলোতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!