• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবিটা একটা অপ্রয়োজনীয় দাবি’


বিনোদন প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০১৬, ০৪:০১ পিএম
‘বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবিটা একটা অপ্রয়োজনীয় দাবি’

ঢাকা: বিদেশি সিরিয়াল ঠেকানো নিয়ে বাংলাদেশে চলছে নির্মাতা, আর্টিস্ট ও ছোটপর্দার কলাকুশলীদের ক্রমাগত আন্দোলন। সমাবেশসহ বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করতেও দেখা গেছে। আর এরমধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত দেশের অন্যতম মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই আন্দোলনকে একটি অপ্রয়োজনীয় আন্দোলন বলে মন্তব্য করেছেন। এমনকি এই আন্দোলনের কিছু কিছু পয়েন্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই নির্মাতা। 

দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ, বিজ্ঞাপন প্রচারে গ্রহণযোগ্য সময়সীমা নির্ধারণ এবং নাটকের বাজেট যৌক্তিক হারে বৃদ্ধিসহ বেশকিছু দাবি তুলেছে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস্ অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। তারই প্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন দেশের অন্যতম নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এই সময়ে এসে বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবিকে অপ্রয়োজনীয় আখ্যা দিয়ে নির্মাতা ফারুকী বলেন, বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবিটা একটা অপ্রয়োজনীয় দাবি। বলা যেতো, বিদেশি সিরিয়ালের চাংক এক ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না। 

এমনকি নাটকের বাজেট নিয়ে এফটিপিও-এর যে দাবি তার সমালোচনা করেন এই নির্মাতা। এ নিয়ে তিনি বলেন, নাটকের বাজেট দ্বিগুণ করতে হবে। মানে কী? যে প্রোডাকশন চলবে না সেটারও টাকা দ্বিগুণ দিতে হবে? বাজেট নির্ধারণ করবে বাজার । কোনো সংঘশক্তি না। আবার কোনো চ্যানেল তার ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য একটা খুব ভালো মানের প্রোডাকশন বানাতে পারে অনেক টাকা দিয়ে, যেটা হয়তো জনপ্রিয় হবে না। সেটাও চ্যানেলের এখতিয়ার, এফটিপিওর না।

এক্ষেত্রে আন্দোলনরত এফটিপিও’-এর আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে নির্মাতা বলেন, অনেকে বলাবলি করছেন, যারা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে বাণিজ্যিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই তারা এখন তাদের যার যার ব্যক্তিগত ঝাল এবং হতাশা মেটানোর চেষ্টা করছেন। এই কথাটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য বলে মনে হলেও আমি মনে করি এফটিপিও একটা কার্যকর বডি হওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারে। তবে সেজন্য তাদের দূরদর্শী, উদার, এবং বাস্তব বোধ সম্পন্ন হতে হবে।

এফটিপিও-এর থাকার খারাপ ও ভালো দিক আছে জানিয়ে ফারুকী তার ফেসবুকে লেখেন, আমাদের কোনো ট্রেড বডি নাই এটা সত্য। এটা (এফটিপিও) না থাকার খারাপ দিক যেমন আছে, ভালো দিকও আছে। খারাপ দিক হলো, ইন্ডাস্ট্রি বিপদে পড়লে কোনো সাংগঠনিক জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা যায় না। আর ভালো দিক হলো, কোনো ধরনের দাদাগিরির বাইরে নতুন প্রতিভা বিকাশ লাভ করতে পারে।

কেউ নাটক বানাতে এলে, টিভি প্রোডাকশন বানাতে এলে এফটিপিও থেকে অনুমোদন নেয়ার যে দাবি উঠেছে তারও কড়া সমালোচনা করেন ফারুকী। যারা এমন কথা উঠিয়েছেন তাদের সমালোচনা করে ফারুকী বলেন, এক ভয়াবহ দাবি তারা করে বসেছে। টেলিভিশনের জন্য প্রোডাকশন বানাতে হলে এফটিপিওর সদস্য হতে হবে বা অনুমোদন নিতে হবে- এই রকম কিছু একটা। না জনাব, এইরকম নিয়মের আওতায় পান্ডাগিরি করার ক্ষমতা আপনাদের দেয়ার কোনোই কারণ নেই। কেননা, আপনারা অতীতে প্রমাণ করেছেন নানারকম রুচির কাজকে এপ্রেশিয়েট করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। আপনারা উচ্চ আসনে বসে বসে আপনাদের রুচি দিয়ে তরুণ অনাগত নির্মাতাদের আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করবেন, এই দিন আর নেই। আপনারা এই নির্ধারণী ক্ষমতায় থাকলে, আজকের বাংলাদেশের বহু তরুণ নির্মাতা ছবি বানানো দুরের কথা, ইন্ডাস্ট্রিতেই ঢুকতে পারতো না। আজকে বাংলাদেশের নাম যে বারবার ভ্যারাইটি, হলিউড রিপোর্টার, স্ক্রিন ডেইলিতে আসছে তার আশি ভাগই বন্ধ হয়ে যেতো। ইটিভি বাংলাদেশে বড় বিপ্লব করেছিলো এই মোগল কালচার ভেঙে দিয়ে অজস্র তরুণ প্রতিভাকে খুঁজে বের করার মধ্য দিয়ে। এই মোগলামির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা আজকে এতো পরে এসে করা যাবে না। 

অন্যদিকে বিদেশি চ্যানেল নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে দিলখোলা অভিনন্দন জানিয়ে ফারুকী আরো বলেন, সরকার আরো ঘোষণা দিয়েছে, ভারতীয় চ্যানেলের ডাউনলিংক ফি’তে ভারসাম্য আনবে অতি দ্রুত। পাশাপাশি দর্শক সংখ্যা নিরূপণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যাপারেও সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। শোনা যাচ্ছে দ্রুতই সব চ্যানেলকে কন্ডিশনাল একসেস সিস্টেম বা সেট টপ বক্সের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আশা করা যায়, এতে করে এই সেক্টরের বহু অনিয়ম আর দূর্নীতি দুর হবে, লড়াই হবে ভালো কনটেন্টের এবং ভালো কনটেন্টের দামও বাড়বে । আমি বিশ্বাস করি এই লড়াইয়ে জেতার মতো তরুণ প্রতিভা আমাদের আছে এবং সামনে আরো প্রতিভার উদয় ঘটবে। 

‘শিল্পে বাঁচি শিল্প বাঁচাই’ প্রতিপাদ্য নিয়ে টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এদিন সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে জমায়েত হয় সব নির্মাতা, প্রযোজক ও শিল্পীরা। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!