• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমতলীতে বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির মাছ


মোঃ সাইদুর রহমান, আমতলী  ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম
আমতলীতে বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির মাছ

আমতলী: ‘ভাতে মাছে বাঙালি’ এবং ‘ধান নদী খাল’ এই তিনে বরিশাল, বাংলার চিরাচরিত এই প্রবাদ বাক্যের মিল এখন গ্রাম-বাংলায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমতলীতে বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির মাছ। ফলে হাটবাজারে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখা যায় না। কিছু দেখা গেলেও তার মূল্য নাগালের বাইরে। 

পরিবেশবিদদের মতে, আমতলীতে এখন বড় কোনো খাল-বিল চোখে পড়ে না। বঙ্গোপসাগরের উজান থেকে প্রবাহিত পানি শাখা নদী পায়রা ও আন্ধারমানিক দিয়ে বেড়িবাঁধের সুইজ গেট দিয়ে শত শত ছোট খাল-বিলের মধ্যে প্রবেশ করলেও শুকনা মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না।

দক্ষিণাঞ্চলে দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত ওয়াপদার বেড়িবাঁধের ভেতরে খাল-বিলে পানি কমার কারণে নিয়মিত ধান ও অন্যান্য ফসলাদি চাষাবাদ করায় বিলের মধ্যে ছোট ছোট খালগুলো অস্থিত্ব এখন মৃতপ্রায়। কালের বিবর্তণে লোকালয়ে খাল-বিল বন্ধ ভরাট করে অনেকে ধানী জমিতে পরিণত এবং তৈরি করা হয়েছে আবাসন। এই খালগুলো সরকারি জমি থাকলেও দখল করে নিচ্ছে বিত্তবান ও প্রভাবশালীরা। যেন দেখার কেউ নেই।

নদীর সাধারণ পানিপ্রবাহের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের বেড়া ও মাটি দিয়ে বাঁধ। ফলে বর্ষা মৌসুমের পর অর্থাৎ শুকনা মৌসুমে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুরে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মা মাছ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বংশবিস্তার করতে পারছে না। আশির দশকের পর জমিতে ব্যাপকহারে নাইট্রো ৫০৫ ইসি বা ফুরাডন ব্যবহার করায় এ অঞ্চলের পানিতে দেশীয় শতাধিক প্রজাতির মাছসহ জোঁক, কেঁচোও বিলুপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া ফসলের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। ফলে জমির উর্বরা শক্তি দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া ৯০ দশকের পর থেকে গ্রামে-গঞ্জে জনসাধারণের মাঝে ব্যাপকহারে কারেন্ট জাল তথা বেহেন্তি জালের ব্যবহার বেড়েছে। খাল-বিল ও পুকুরে মাছের আকারভেদে এসব জালের ব্যবহার করায় মা মাছসহ ছোট পোনা মাছের বাচ্চাও ধরা পড়ছে। ২৫-৩০ বছর ধরে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত চলে আসছে। ফলে বাজারে ভরা মৌসুমে দেশি জাতের কৈ, টাকি/চেং, টেংরা, ভেদি, পুটি, বাইন, শিং, মাগুড়, শোল, পাবদা, খৈলশা, ফাইলশা, গুলিশা, শলা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, হরিনা চিংড়ি, মৌ কাটালি, কোড়াল, বোতড়া, বৌকনা, বোয়াল, গজাল, তিতপুটি, মলিনদা পুটি আরো শতাধিক জাতের দেশি মাছ এখন হারিয়ে যাচ্ছে। 

আমতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার জানান, দেশের স্বল্প মৎস্যসম্পদকে রক্ষার জন্য নদী-নালা, খাল-বিলের গতিপ্রবাহ ঠিক রেখে আবশ্যক দেশি মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলার পাশাপাশি ডিমওয়ালা ও মা মাছ রক্ষার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ঈসা জানান, আমরা কৃষকদের বিভিন্ন সেমিনারে বলে থাকি, ধানক্ষেতে মাত্রারিক্ত কোনো কীটনাশক বা রাসায়নিক সার দেয়া যাবে না। কিন্তু কীটনাশক, সার এটা জাতীয়ভাবে নির্ধারণ করা এগুলো নিষেধ করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির সময় এক ছাতাতে দুইজন হাঁটলে একজন একটু কম ভিজবে একজন একটু বেশি ভিজবে। 

এ ছাড়া কারেন্ট জাল, বেহন্তি জাল, গড়া জাল, হাতে টানা ঘন কারেন্ট জাল ব্যবহার রোধসহ জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমাতে পারলে অন্তত বর্ষা মৌসুমে দেশি জাতের মাছগুলো বংশ বিস্তার করতে পারবে।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!