• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘রিজার্ভ হ্যাকিং অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে কোন


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৭, ২০১৬, ০৮:৫৯ পিএম
‘রিজার্ভ হ্যাকিং অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে কোন

সোনালীনিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে কোনও প্রভাব ফেলবে না। মুদ্রানীতি বাধাগ্রস্ত হবারও কোন আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনায় দেশের অর্থনীতিতে আপাততঃ ক্ষতি হলেও গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ইতিমধ্যে কিয়দংশ অর্থ ফেরত পাওয়া গেছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাকি অর্থও ফেরত আনা যাবে।

দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিত আছে বলেও দাবি করেন তিনি। আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম। এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আরো বড় রকমের হ্যাকিং বন্ধ করা গেছে। একই সঙ্গে ফিলিপাইন সরকারের সহযোগিতায় অর্থ ফেরত আনার তৎপরতার ফলে এ বিষয়ে সম্ভাব্য বিরূপ পরিস্থিতি ঠেকানো গেছে। 

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য গঠিত কমিটি অন্তবর্তীকালীন একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সে মোতাবেক নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সকল তৎপরতার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে কোনও প্রভাব ফেলবে না।

সংসদ নেতা জানান, মুদ্রানীতি গ্রহণের প্রাক্কালে জুন ২০১৬ এর শেষে যে পরিমাণ নীট বৈদেশিক সম্পদের (১ হাজার ৮৬৬ বিলিয়ন টাকা) লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে, তার তুলনায় মার্চ’ ২০১৬-এর শেষে প্রকৃত নীট বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণ উক্ত রিজার্ভ হ্যাংকিংয়ের পরেও দাঁড়িয়েছে অনেকে বেশী। অর্থাৎ ১ হাজার ৯৮১ বিলিয়ন টাকা। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনার ফলে মুদ্রানীতি বাধাগ্রস্ত হবারও কোন আশংকা নেই।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য নাবিল আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। মানুষ ন্যায়-বিচার পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রোধে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

শেখ হাসিনা বলেন, সব ধরনের জঙ্গিবাদ, নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ও হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার পুলিশসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে নির্দেশ প্রদান করেছে। পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের অফশোর ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন অফশোর ব্যাংকের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে প্রবাসীদের জন্য তিনটি ব্যাংক খোলা হয়েছে। অনেক উন্নত দেশেই এমন অফশোর ব্যাংক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেকে বিদেশেই টাকা রাখেন। দেশে আনেন না। আবার অনেকে দেশে থেকে বিদেশে টাকা নিয়ে গেছেন। এটা বেশি ঘটেছে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময়। সে সময় ব্যবসায়ীদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। তারা দেশে টাকা রাখতে ভরসা পাচ্ছিলেন না, ওই সময় বিদেশে টাকা পাঠিয়েছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা ওই সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, যা অনেক ধরা পড়েছে। ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। বর্তমান সরকার তাদের পাচারকৃত অর্থ কিছুটা ফেরত এনে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ করা ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সুরক্ষা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে গেছে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় আমাদের সরকারের বর্তমান আমলেও উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি, যার বহির্প্রকাশ ঘটছে একের পর এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্যে দিয়ে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য ফরচুন ম্যাগাজিনে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নেতাদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তর্ভুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রভাবশালী সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’তেও তাঁকে  (শেখ হাসিনা) বিশ্বের চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এসব অর্জন এদেশের সকল মানুষের। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতেও এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদেশের উন্নয়নে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হব। আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতগুলো আমার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা যে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, ফরচুন ম্যাগাজিনের এই স্বীকৃতি তার আরেকটি প্রমাণ।

অপর এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে যে ২০টি কম্পানি ভেজাল দিচ্ছে সে ২০টা কম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আমাদের দেশে নয় পৃথিবীর অনেক দেশেই এমনটা থাকে যে কিছু লোক অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে চায়। আর করতে যেয়ে তারা এই ভেজাল দিয়ে মানুষের ক্ষতি সাধন করে। বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে থাকে। আমাদের সরকার কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট সক্রিয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/মে

 

Wordbridge School
Link copied!