পাবনা : পাবনায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার (৬০), তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন (৫০) ও দত্তক নেয়া মেয়ে সানজিদা (১২) হত্যা মামলায় পালিত ছেলে ও মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে পাবনা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এর বিচারক তানবির আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আব্দুল জব্বার ছিলেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নিঃসন্তান এই দম্পতি একদিন বয়সী শিশু সানজিদাকে দত্তক নিয়ে পাবনা পৌর শহরের দিলালপুর মহল্লায় বসবাস করতেন। এছাড়া তারা বাসার পাশে পাবনা ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনকে আপন ছেলে হিসেবে লালপালন করছিলেন। তারা তাকে পরিবারের সদস্যের মতোই যত্ন নিতেন। তানভীরও তাদের বাবা মা বলে ডাকতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে জব্বারের সঞ্চয়, নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি লোভ জন্ম নেয় তানভীরের মনে। পরিকল্পনা শুরু করেন পুরো পরিবারকে হত্যা করে সম্পদ দখলের।
২০২০ সালের ৩১ মে রাতে নিজ গ্রাম নওগাঁর হরিপুর থেকে ফিরে জব্বারের দিলালপুর মহল্লার ভাড়া বাসায় ওঠেন তানভীর। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র ও কাঠের বাটাম দিয়ে প্রথমে ব্যাংক কর্মকর্তা জব্বার, পরে তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন এবং সর্বশেষ তাদের কন্যা সানজিদাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। এরপর বাথরুমে গিয়ে গোসল করে রক্তমাখা কাপড় ধুয়ে বাড়ির আলমারি ও আলমারির লকার থেকে নগদ দুই লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি এবং স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ফজরের আজানের সময় নির্বিঘ্নে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
ঘটনার পাঁচদিন পরে ৫ জুন মৃতদেহ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের দেয়া খবরে পুলিশ বাসা থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পরপরই বিষয়টি উদঘাটনে মাঠে নামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম।
এ ঘটনায় নিহত আব্দুল জব্বারের ভাই আব্দুল কাদের বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার মাত্র একদিন পর ৬ জুন রাতে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। সেই সময় তার দেখানো স্থান থেকে লুণ্ঠিত কিছু মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ তদন্ত শেষে মামলার একমাত্র আসামী তানভীর হোসেনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারী আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
আদালত ২২ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সোমবার দুপুরে আদালত অভিযুক্ত তানভীর হোসেনকে মৃত্যুদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করেন। চুরির জন্য ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবি ছিলেন অতিরিক্ত পিপি আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু। আর আসামীপক্ষে আইনজীবি ছিলেন কেএম মিজানুর রহমান ও কাজী মকবুল আহমেদ বাবু।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আসামীপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামীর পক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আপিলের মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পাব।
পিএস
আপনার মতামত লিখুন :