পুরো আর্জেন্টিনা একদিকে আর মেসি আরেকদিকে। সবসময়ই আর্জেন্টিনাতে অনাগ্রহের পাত্র ছিলেন মেসি। শতবর্ষী কোপার ফাইনালে হেরে অবসর নিয়ে, সেই আর্জেন্টাইনদেরই যেন জিতিয়ে দিয়ে চোখের জলে বিদায় নিলেন মেসি। তবে দেরিতে হলেও ভুল ভেঙেছে আর্জেন্টাইনদের। মেসিকে ফেরাতে রাস্তায় নেমেছে তারা; কিন্তু মেসি কি আর ফিরবে আর্জেন্টিনা দলে?
শুধু কি আর্জেন্টিনা? মেসিকে ফেরাতে কে না আকুতি জানিয়েছে! সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমিরাই চাচ্ছেন মেসি তার বিদায়ের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিয়ে আবারও আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন।
চিলির কাছে কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের পর তিনিও কেঁদেছিলেন মেসির সঙ্গে। মাঠে না আসলেও বান্ধবীর কান্না ছুঁয়ে গেছে মেসির হৃদয়কে। মেসির অবসর নেয়াটা এমন পুরো বিশ্ব মেনে নিতে না পারলেও তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন বান্ধবী আনতোনেল্লা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসির ভক্তরা বিভিন্ন পোস্টে তাকে ফিরে আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এমনকি অনুরোধ জানিয়েছেন তার বান্ধবী আনতোনেল্লা রোকুজ্জোও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজের আইডিতে দেয়া এক পোস্টে রোকুজ্জো লেখেন, ‘তুমিও অন্য সবার মতো মানুষ। তোমারও অনুভূতি রয়েছে এবং সবসময় কিন্তু মানুষের সময় ভালো যায় না। অথচ তোমাকে একসময় থামতেই হবে।’
বান্ধবীর এমন সমর্থন অবশ্য মেসিকে এই ভাঙা অবস্থা থেকে শক্ত অবস্থায় নিতে বেশ কাজ করবে। মেসি কি পারবেন আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে না দিয়ে থাকতে? আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে দিয়েগো ম্যারডোনা পর্যন্ত মেসিকে অনুরোধ করেছেন, তাকে আবারো জাতীয় দলে ফিরে আসার জন্য। শত্রুতা ভুলে ব্রাজিলও মেসিকে ফিরতে অনুরোধ করেছেন। সময়ই বলে দেবে মেসি আদৌ ফিরবেন কি না।

তবে মেসির ভক্তরা মেসির এই বিদায়কে মেনে নিতে পারছেন। তারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করছেন। সেই অনুভূতির ছোঁয়া মেসি অব্দি পৌঁছবে কি না তা বড় কথা নয় তারা যে মেসিকে ফের মাঠে চাচ্ছেন সেটাই বড় কথা।
ফেসবুক থেকে নেয়া কিছু স্ট্যাটাস সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো─
তারেক আনন্দ : আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাসরি ও কিংবদন্তী ফুটবলার ম্যারাডোনা চান মেসি ফিরে আসুক জাতীয় দলে। আপনারা কি চান মেসি ফিরে আসুক জাতীয় দলে? আওয়াজ দেন...
মেসিকে ফিরে আসার জন্য আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাসরি বলেছেন, ‘জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে আমি গর্বিত এবং আমি মেসিকে বলছি কোন ধরনের সমালোচনা শোনার দরকার নেই। আমি চাই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়টি আরও অনেক বছর দেশের হয়ে খেলুক।
অন্যদিকে কিংবদন্তী ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘মেসিকে জাতীয় দলের সঙ্গে থাকতে হবে। বিশ্বকাপ জয়ের জন্য তাকে রাশিয়া যেতে হবে। তাকে দলের অন্য ছেলেদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা আমাদের ফুটবলের ধ্বংস দেখতে চাই না।’

নিলয় : হেরে যাওয়া মানেই পরাজিত হওয়া নয়... কাম ব্যাক মেসি।
নাহিদ রহমান : লিও মেসিকে নিয়ে একাত্তর টিভিতে দেব চৌধুরীর রিপোর্টটা দেখে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলেছি!! মেসিদের বিদায় নয়, ধন্যবাদ জানাতে হয়!
ওমর ফারুক রাসলে : মেসি আসবে মেসির মতোই... মেসি তোমার এই হাত বিদায়ের নয়। অভিনন্দের। তুমি ফেরে অাসবে বীরের বেশে। হাসবে সবাই তোমার এই অভিনন্দের জবাবে। তোমার অপেক্ষায় ভক্তরা।
জাবেদ মজুমদার : ‘#মেসি_তোমাকে_মায়ের_চেয়েও_বেশি_ভালোবাসি’
ঝিরঝিরে বৃষ্টি। যেন আকাশও কাঁদছে! এরই মধ্যে বিমানবন্দরের মূল ভবন ছেড়ে বেরিয়ে এল বাসটি। ভেতরের যাত্রীদের সবার চোখেমুখে শোকের বিহ্বলতা। এ যেন শ্মশানযাত্রা। এভাবেই গত সোমবার দেশে ফিরলেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। অথচ ফেরার কথা ছিল অন্যভাবে। হওয়ার কথা ছিল বিজয়যাত্রা। হুডখোলা বাসে যে ট্রফি নিয়ে মিছিলের অপেক্ষা আর্জেন্টিনার কেবলই বাড়ছে।
তবে মেসিদের কিন্তু বীরের মতোই বরণ করে নিয়েছে বিমানবন্দরের সামনের ভিড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করেও যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন। দলের প্রতি যাদের ভালোবাসা আর আবেগ সত্যিই অন্য রকম। মায়ের কোলে আর বাবার কাঁধে ছিল ছোট শিশুও। কারও কারও হাতে ধরা ব্যানার-ফেস্টুন। বেশির ভাগ ব্যানারের ভাষাই এক : না মেসি, যেয়ো না। তবে এরই মধ্যে একটা ব্যানার আলাদা করে চোখে পড়ল সবার। যাতে ধরা মেসিকে নিয়ে তার ভক্তদের ভালোবাসা, ‘মেসি, আমি তোমাকে আমার মায়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।’
সেই ভিড়ে থাকা ২৯ বছর বয়সী হুয়ান পাবলো পিনাসকো যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না, ‘কী যে দুঃখ লাগছে বলে বোঝাতে পারব না, মনে হচ্ছে আমার হৃদয় এখনো দুই টুকরো হয়ে গেছে।’
বুয়েনস এইরেসের মিনিস্ত্রো পিস্তারিনি বিমানবন্দরে বৃষ্টিতে ভিজে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা থাকা ভক্তদের আকুতিটা কি শুনেছেন? বৃষ্টির জলের সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়া অশ্রু কি চোখে পড়েছে মেসির? সেটা না পড়তে পারে, কিন্তু পুরো আর্জেন্টিনার আকুতি নিশ্চয় কানে গেছে মেসির! ডিয়েগো ম্যারাডোনা থেকে খোদ আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও মেসিকে যে বলছেন, ‘যেতে নাহি দেব হায়!’
তবে কতটা দুঃখ থেকে মেসি অবসর নিয়েছেন, সেটা ছুঁইয়ে যাচ্ছে তার পরিচিতজনদের। রোজারিওতে মেসির প্রথম কোচ ছিলেন এরনেস্তো ভেচ্চিও। এই কঠিন সময়েও মেসির পাশেই আছেন, ‘আর কত সমালোচনা সইবে ও? চলে যাওয়ার পুরো অধিকারই আছে তার। আমি নিজেও চাই না ও চলে যাক। দলে আরও ১০ জন খেলোয়াড় থাকার পরও ওকেই ত্রাণকর্তা ভাবতে যাওয়া খুবই একটা অবিচার।’
আনোয়ার আরাফ : ফিরে_এসো_মেসি... আমি কেঁদেছি, কাঁদছি, যা হয়ত কখনো শেষ হবেনা, কিন্তু মেসি সে কি করলো, তার বিদায় কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
ইয়াছিন আহমেদ : মহাকালের ট্রাজিক মহানায়ক আধুনিক ফুটবলের কিংবদন্তী লিওনেল মেসি
নদী : বরফে গলা নদী বস মেসির হাতে কাপটি আসতে পারলো না এটা মেসির ব্যর্থতা নয়। বরং সেই কাপটির ব্যর্থতা যে বস মেসির মতো খেলোয়ারের হাতে উঠতে পারলো না।
ইমরোজ আফ্রিদী: বেচারার লাক কতটা খারাপ...পরপর ৩ টা ফাইনাল খেলেও কাপ জিত্তে পারলোনা... রাগে দুঃখে জাতীয় দল থেকে অবসরে গেল... (তবুও তুমি মেসি নাম্বার ১ কেউ মানুক আর না মানুক)
আরশিহা জাহিন অন্তরা : মেসির জাতীয় দল থেকে বিদায়ে আমি সত্যিই স্তম্ভিত! কিন্তু একদিন গর্বের সাথে সবাইকে বলবো যে ১০ নাম্বার জার্সির এই যাদুকর কে দেখেছি ৯ জন খেলোয়ারের থেকে বল কাটিয়ে নিয়ে গোল দিতে... বিশ্বকাপ ফুটবল আর দেখা হবে কিনা সন্দেহ আছে।
নুর মোহাম্মদ : যুদ্ধে গিয়ে, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসার চেয়ে বীর যোদ্ধার ন্যায় যুদ্ধের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে যুদ্ধ করে মরা অনেক ভাল।
এসএ শাহীন আহমেদ : তবে এতে কোনো সনদে হ নাই যে এই মুহুরতে ফুটবল দুনিয়ার রাজা... ওনলি ওয়ান বস মেসি।
রূপালি রূপা : আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করতাম জাস্ট মেসির জন্য। আর সেই মেসি নাকি আর খেলবে না। তাই মনটা অনেক খারাপ। কিছু ভালো লাগছে না... আই মিস ইউ আ লট লিওনেল মেসি অ্যান্ড আই লাভ ইউ সো মাচ অলওয়েজ...

শেখ মাসুম বিল্লাহ সোহান : কেদোঁনা বস, পানি মুছে দেবার মত অনেক আছে, ফিরে এসো তুমি। আমাদের মাঝে, তুমি আছ বলে আমরা ফুটবলকে প্রচন্ড ভালবাসি।
শেখ সুজন : ফুটবল প্রেমীদের জন্য একটি দুঃখের দিন। আমরা সকলে তোমাকে মিস করব মেসি
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন :