ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জানাজা পেল ওসমান হাদি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জানাজা পেল ওসমান হাদি

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা শনিবার রূপ নেয় এক অভূতপূর্ব জনসমুদ্রে। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা। প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় জানাজাগুলোর একটি। 

হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহিদ শরিফ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা শেষ হয়েছে।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াটার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার অংশগ্রহণে তার নামাজে জানাজা শুরু হয়। জানাজায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

দুপুর ২টায় নির্ধারিত জানাজার অনেক আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় দক্ষিণ প্লাজা ও আশপাশের এলাকা। খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট, মানিক মিয়া এভিনিউ ও সংসদ ভবনের আশপাশের সড়কগুলোতে মানুষের ঢল নামে। হাতে জাতীয় পতাকা, মুখে স্লোগান আর চোখে অশ্রু নিয়ে শেষ বিদায়ে শরিক হন নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জানাজার আগে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গোসল শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে হাদির মরদেহ দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়। মরদেহ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শোক আর স্লোগানে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো-এমন স্লোগানে বারবার কেঁপে ওঠে প্রাঙ্গণ।

জনস্রোতের চাপ সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। সংসদ ভবন ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বডি ওর্ন ক্যামেরা ও রায়োট কন্ট্রোল গিয়ারসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। ১৬টি প্রবেশপথ দিয়ে ধাপে ধাপে মানুষকে ভেতরে ঢোকানো হয়।

হাদির মৃত্যুতে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় সব সরকারি ও বেসরকারি ভবনে, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও পালিত হয় শোক কর্মসূচি।

এদিকে, ওসমান হাদির জানাজা ঘিরে সংসদ ভবনের আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়ে হাদির জানাযায়।

জানাযার নির্ধারিত স্থানের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন সড়কে অবস্থান করছেন ছাত্র-জনতা। জানাজায় অংশ নিতে এসে অনেকেই বলছেন-  এটা এক ঐতিহাসিক জানাযা, এত মানুষের সমাগম আর কখনো দেখিনি।

এছাড়া বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জানাজায় উপস্থিত হতে দেখা গেছে। এ সময়- ‘তুমি কে, আমি কে? হাদি, হাদি; আমরা সবাই হাদি হবো’ -এমন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়।

শেষ বিদায়ের এই দিনে দক্ষিণ প্লাজা শুধু একটি জানাজার স্থান ছিল না, তা পরিণত হয় শোক, শ্রদ্ধা ও প্রতিবাদের এক ঐতিহাসিক সমাবেশে। অনেকের ভাষায়, এ জানাজা হয়ে থাকবে সময়ের সাক্ষ্য হয়ে-যেখানে একজন মানুষের বিদায় রূপ নেয় একটি প্রজন্মের অনুভূতিতে।

এসএইচ 

Link copied!