মসজিদে শিশুদের সাথে রুক্ষ আচরণ, কী বলে ইসলাম    

  • তারেক সাঈদ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২১, ০৩:২১ পিএম
মসজিদে শিশুদের সাথে রুক্ষ আচরণ, কী বলে ইসলাম    

ছবি : ইন্টারনেট

ঢাকা : আমরা আমাদের শিশুদেরকে মসজিদে নিয়ে যাই। বিশেষ করে রমজান মাস, দুই ঈদ ও জুমার দিনে। বাবা, দাদা-নানা ও ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে যেতে শিশুরাও আনন্দ ও আগ্রহবোধ করে। তাই পাঞ্জাবি-টুপি পরে তারাও বড়দের হাত ধরে নামাজের জন্য মসজিদে চলে আসে। বাংলার ঐতিহ্যের এটি একটি চোখ জুড়ানো দৃশ্য। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই শিশুদের আল্লাহর ঘরের সঙ্গে পরিচয় করানো ও নামাজের জন্য অভ্যস্ত বানানো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কেননা, শিশুকালে যে জিনিসে অভ্যাস হয়, পরে তা করা সহজ হয়। নচেৎ তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্যই হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়স থেকেই নামাজের নির্দেশ দাও। আর যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হবে, তখন তাদের নামাজে অবহেলায় শাস্তি প্রদান করো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৯৫)

কিন্তু সমাজের অধিকাংশ বয়োবৃদ্ধ মুসল্লিদের মাঝে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো, ছোট ছোট শিশুকে মসজিদে নেওয়া যাবে না কিংবা গেলেও তাদের সবার পেছনে দাঁড় করাতে হবে। এই কোমলমতি শিশুদের সাথে এমন রুক্ষ-রুঢ় আচরণ করা হয়। যার ফলে মসজিদের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যায়। আর অভিভাবকরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। অথচ আমরা জানি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করতেন, তখন তাঁর নাতিদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.) তাঁর ঘাড়ে চড়ে বসতেন। এমনকী তাদের এ খেলায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় বিশেষ সময় অতিবাহিত করতেন। সাহাবিরাও তা প্রত্যক্ষ করতেন।

তবে শিশুদের মসজিদে নেওয়ার ক্ষেত্রে শরীয়ত নির্ধারিত কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। প্রথমত, শিশু একেবারে অবুঝ হলে মসজিদে আনা নিষেধ। যেমন: তিন-চার বছরের বাচ্চা। এসব বাচ্চারা লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি, নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম, পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি করে মসজিদের আদবের খেলাফ করে। একারণেই তাদের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত ওয়াসিলা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মসজিদকে অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো, তদ্রূপ ক্রয়-বিক্রয়, বিচার-আচার, উচ্চস্বর, দণ্ডদান ও তরবারি কোষমুক্ত করা থেকে বিরত থাকো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৭৫০)
 
দ্বিতীয়ত, নামাজের কাতারে বুঝমান নাবালেগ শিশুর অবস্থান। বুঝ হয়েছে, এমন নাবালেগ শিশুদের ব্যাপারে বিধান হলো, যদি শিশু একজন হয়, তাহলে তাকে বড়দের কাতারেই সমানভাবে দাঁড় করাবে। এ ক্ষেত্রে বড়দের নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না। একাধিক শিশু হলে সাবালকদের পেছনে পৃথক কাতারে দাঁড় করানো সুন্নত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা হলে, বড়দের কাতারেও মুসল্লিদের মাঝে মাঝে দাঁড়াতে পারবে। (আলবাহরুর রায়েক-১/৬১৮, আদ্দুররুল মুখতার-১/৫৭১) মসজিদে ছোটরা এলে দুষ্টুমি করবে-এটাই স্বাভাবিক। তাই ছোটরা নামাজে এলে তাদেরকে পাশে নিয়ে নামাজে দাঁড়ান, তাদের আলাদাভাবে দাঁড়াতে দেবেন না। ছোটরা আলাদাভাবে দাঁড়ালে দুষ্টুমি করবে, বড়দের সঙ্গে একত্রে দাঁড়ালে দুষ্টুমি করার সুযোগ পাবে না। সেই সঙ্গে তাদের আদর-স্নেহ দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, মসজিদে হাসাহাসি-দুষ্টুমি করলে মসজিদের পবিত্রতা এবং মুসল্লিদের মনোযোগ নষ্ট করে। দেখবেন তারা চুপ থাকবে। হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের দয়া আর বড়দের শ্রদ্ধা করেনা সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত না! (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১/৬)

তুরস্কের বেশিরভাগ মসজিদের দেওয়ালে একটা কথা লেখা আছে। কথাটি হলো ‘মুহতারাম, নামাজ পড়ার সময় যদি পেছনের সারি থেকে বাচ্চাদের হাসির আওয়াজ না আসে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাপারে ভয় করুন।’ পরিশেষে এটাই বলবো, শিশুরা অনুকরণকারী হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত হবে শিশু বয়স থেকেই তাদের ভালো বিষয়ে অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলেই বড় হয়ে একজন সৎ মানুষ ও খোদাভীরু হয়ে উঠবে। ইনশাআল্লাহ!

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!