ঈদের আগে সরকারি চাকরিজীবীরা শেষ অফিস করেছেন বৃহস্পতিবার। শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি, রোববার শবে কদরের ছুটি, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ছুটি, এরপর তিন দিন ঈদুল ফিতরের ছুটি, তারপর ফের দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আগামী ১০ জুলাই আবার অফিসে ফিরবেন তারা। লম্বা এই ছুটি সামনে রেখে ঈদের দিন পাঁচেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে বাড়ি ফেরা।
স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যান্ত্রিক শহর ঢাকাকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় জানাচ্ছেন রাজধানীতে বিভিন্ন পেশার কারণে অবস্থান করা মানুষজন।
সড়ক পথ, রেল পথের পাশাপাশি নৌ পথে বাড়ি ফেরে বহুমানুষ। শুক্রবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, কেউ স্বপরিবারে যাচ্ছেন, কেউ কেউ পরিবারকে লঞ্চে তুলে দিচ্ছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌ পথে যাতায়াতের অন্যতম টার্মিনাল সদরঘাটে উপচেপড়া ভীড়।
কথা হয় ইলিয়াস আকরামের সঙ্গে। স্বপরিবারে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। থাকেন মোহাম্মদপুরে। স্ত্রী আর দুই কন্যাকে নিয়ে এবার আগেভাগেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন ইলিয়াস।
তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে লম্বা ছুটি পেয়েছি। অনেকদিন যাওয়া হয় না বাড়িতে। তাই আগেই রওনা দিলাম।’
স্ত্রী, এক ছেলে আর ছোট ভাইকে এগিয়ে দিতে এসেছেন হুমায়ন কবির। পেশায় ব্যবসায়ী হুমায়ন কবিরের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়। ব্যবসার কারণে তাকে আপাতত ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। ঈদের আগে তিনি বাড়ি যাবেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারকে পাঠিয়ে দিতে সদরঘাটে এসেছি।’
টিকিট পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিকিট আগেই বুক করা ছিল।’ কতো টাকায় টিকিট কিনলেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডাবল কেবিন ২৫০০ টাকায় কেনেছি।’
এরকম হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঘরে ফেরার এ টার্মিনাল থেকে ঈদের আগের সাতদিনে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঘরে ফিরবে বলে বিআইডব্লিটিএ'র ধারণা।
বাড়ি ফেরার জন্য মুখিয়ে আছে ছোট্ট শিশু আরমান। মা-বাবার সঙ্গে দাদুর বাড়ি লালমোহনে যাচ্ছে সে। আরমান বলে, ‘দাদুর বাড়িতে ঈদে অনেক মজা হয়। ঈদের দিনে নতুন কাপড় পড়বো। দাদুর সাথে ঘুরবো। দাদুর বাড়িতে আম্মু বকা দেয় না। দাদুর বাড়ি আমার খুব ভালো লাগে। সবাই আমাকে অনেক আদর করে।’
নাড়ির টানে নীড়ে ফেরা এসব মানুষকে সচেতন করতে সদরঘাটে চলছে ছোটখাটো নানারকম ক্যাম্পেইন। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ডে লেখা সতর্কবাণী। এসব প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা।
অন্যদিকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তা। মাইকেও চলছে নিরবিচ্ছিন্ন নির্দেশনা।
লঞ্চ মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং ঘাট অব্যবস্থা নিয়ে যাত্রীদের আছে নানারকম অভিযোগ। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ অনেক কিছু। সবকিছুর বিনিময়ে যাত্রীদের প্রত্যাশা নিরাপদে ঘরে ফেরা।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন
আপনার মতামত লিখুন :