ঢাকা: রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় তিনটি দেশ থেকে সার আমদানির ৫টি প্রস্তাব এবং গ্যাস চালিত একটি বেসরকারি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্ধি ও বর্ধিত সময়ের জন্য ট্যারিফ হার নির্ধারণসহ ৮টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মরক্কো থেকে সার আমদানির ৫টি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাঁচ প্রস্তাবে মোট সার আমদানি করা হবে ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এতে ব্যয় হবে ৮৮৩ কোটি ৭৮ লাখ ৯০০ টাকা।
সূত্র জানায়, পাঁচ প্রস্তাবের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার ১০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৭ কোটি ৯৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
সৌদি আরব থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ ডলার (প্রতি মেট্রিক টন ৩৫৪.১৬ ডলার হিসাবে)। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৭ কোটি ৯৩ লাখ ৫২ হাজার ৮০০ টাকা।
একই দেশ (সৌদি আরব) থেকে ৯ম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ডলার (প্রতি মেট্রিক টন ৫৮৭.৭৫ ডলার হিসাবে)। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬০ কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার টাকা।
মরক্কো থেকে ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রতি মেট্রিক টন ৪০৬ ডলার হিসাবে)। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৫ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
একই দেশ (মরক্কো) থেকে ৯ম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার (প্রতি মেট্রিক টন ৫৬৭ ডলার হিসাবে)। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫১ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, বৈঠকে হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্ধি এবং বর্ধিত মেয়াদের ট্যারিফ নির্ধারনের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বর্ধিত মেয়াদে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৪১৫ টাকা (৪.০৫ সেন্ট)। বর্ধিত সময়ের জন্য উদ্যোক্তা সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৮ লাখ টাকা।
জানা যায়, স্পন্সর কোম্পানি হরিপুর পাওয়ার লিমিটেড-এর সঙ্গে সরকারের ২২ বছর চুক্তির মেয়াদ চলতি ৩০ নভেম্বর শেষ হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে রাজশাহীতে শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান চত্বর রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে কমিটি। এই দুই প্যাকেজ প্রস্তাবে মোট ব্যয় হবে ২৪৬ কোটি ৫১ লাখ ১১ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্যাকেজ নং-ডব্লিউ পি-৮০-তে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং প্যাকেজ নং-ডব্লিউ পি-৮০বি- তে ব্যয় হবে ৮৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। ‘রাজশাহী মহনগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৭টি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
এর মধ্যে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।ভপাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর আওতায় সাপ্লাই-অপারেট-ট্রান্সফার ভিত্তিতে ২২ বছর মেয়াদে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে সৌদি আরব সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান ‘রেড সী গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল’ (আরএসজিটিআই)।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে সম্পাদিতব্য চুক্তির খসড়াটি অনুমোদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পে সৌদি প্রতিষ্ঠানের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ইক্যুইটি’র পরিমাণ ৩০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ ঋণ। আপফ্রন্ট ফি ২ কোটি ডলার, কনসেশন ফি ১৮ ডলার/টিই্ইউ, ট্যারিফ রেভিনিউ উভয় পক্ষ ৫০ শতাংশ হারে। এছাড়া বাৎসরিক কনসেশনেয়ার ফি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পাবে ২৫০ ডলার। যা প্রতিবছর ২ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়বে। সব মিলিয়ে ২২ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ-এর আয় হবে ৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ডলার (বর্তমান ডলার দর ১১০.১৯ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় ৩ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা)।
সূত্র জানায়, এ লক্ষ্যে আরএসজিটিআই কর্তৃক গঠিত স্পেশাল পারপোজ ভেহিক্যাল (এসপিভি) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ-এর মধ্যে একটি ‘কনসেশন এগ্রিমেন্ট’ সই করা হবে। ইতোমধ্যেই চুক্তির একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :