ঢাকা : ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস আজ। ৪৮ বছর আগে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ভারত নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে এবং পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ফারাক্কা অভিমুখে লাখো জনতার লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে ১৬ মে ফারাক্কা দিবস নামে পরিচিতি লাভ করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১৮ কিলোমিটার উজানে ১৯৭৫ সালে ভারত ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধন করে। এর প্রতিবাদে মওলানা ভাসানীর লংমার্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। সে সময় চুক্তি অনুযায়ী, পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি পূরণ না হওয়ায় মরুকরণের দিকে যাচ্ছিল বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। যদিও সে অবস্থার এখনো পরিবর্তন হয়নি।
১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী খরা মৌসুমে জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ সে পানি পায়নি।
পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে পাকিস্তান আমলে ১৯৫২ সাল থেকে। তখন থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়নি, ফলে ভারত তার-মত কাজ করে গেছে। একবারই তারা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে যখন ভাসানী ফারাক্কা লংমার্চ করে। তারা সত্যি ঘাবড়ে গিয়েছিলো, যে ভাসানী সত্যি এটি ভেঙ্গে ফেলবে।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল বলেন, এমন আন্দোলন বাঙ্গালী না কখনও দেখেছে আর মনে হয় না কখনও দেখবে। এখনকার রাজনৈতিক নেতারা ভাসানীর সেই শক্তি আসলে ধারণ করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে ভারত ১৯৭৫ এ পরীক্ষামূলক অল্প কদিনের কথা বলে পানি প্রত্যাহার শুরু করে, পরবর্তীতে তা আর বন্ধ হয় নি। ফল হয়েছে ৪৮ বছর ধরে ফারাক্কা ব্যারাজের প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির হাহাকার।
অবশ্য পরবর্তীতে ভারতের গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগির নিয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লীর মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। যা কিছুটা হলেও প্রাপ্য পানি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখছে। তবে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আর দু'বছর পর। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে প্রতিবছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেবে ভারত।
ফারাক্কা ব্যারাজের মাধ্যমে নদীর পানি সরানোয় শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের মালদহ, মুর্শিদাবাদসহ আরও উজানে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আকস্মিক বন্যা, নদী ভাঙনে প্রতিবছর ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বহু মানুষ।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :