• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসুলের আদর্শ


ধর্মচিন্তা ডেস্ক মে ২৩, ২০২৪, ১১:৫১ এএম
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসুলের আদর্শ

ঢাকা : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের আগে পৃথিবী ছিল ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। চারদিকে ছিল অশান্তি ও অরাজকতা। পৃথিবী থেকে ভ্রষ্টতা, অরাজকতা ও অশান্তি দূর করতে আগমন ঘটে রাসুল (সা.)-এর। তিনি অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির স্নিগ্ধ বাতাস ছড়িয়ে দেন। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছুটেছেন শান্তির ফেরি করে। শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় করেছেন নিরন্তর সংগ্রাম ও সাধনা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া ১০৭)

শৈশবকাল থেকেই তিনি ছিলেন শান্তিপ্রিয়, কোমলপ্রাণ, নীতিবান, সৎ, বিশ্বস্ত ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহামানব। শৈশবেই গোটা আরবে তিনি ভূষিত হয়েছিলেন ‘সাদেক’ তথা সত্যবাদী এবং ‘আল আমীন’ তথা বিশ্বস্ত উপাধিতে। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং গোত্রীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য তরুণ বয়সে প্রতিষ্ঠা করেন হিলফুল ফুজুল নামক শান্তিসংঘ। নবুওতের পরও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভূখণ্ডের ওপর সুখ-শান্তির পরিবেশ স্থাপন করেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা : স্বর্থপরতা, হিংস্রতা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমন করে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তরুণ বয়সে তিনি এই সংগঠনের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেন। মানুষের কল্যাণে গড়া এটিই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সাংগঠনিক সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/৩৫৫)

একাত্মবাদের আদর্শ : পৌত্তলিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত আরব থেকে কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করে এক আল্লাহে বিশ্বাসী তাওহিদের আদর্শে সমাজকে নবরূপে রূপায়িত করেন।

মানবতার পুনঃজাগরণ : পাপ ও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত আরববাসীকে আলোর পথ দেখিয়ে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ^মানবতার ভিত্তিতে এক উন্নত ও আদর্শ সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন করেন আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন এক সমাজব্যবস্থা স্থাপন করেন, যাতে রক্তের সম্পর্কের চেয়ে ইমানের বন্ধনই ছিল মজবুত। আভিজাত্যের গৌরব, উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র, কালো-সাদার বৈষম্যের পরিবর্তন করে সাম্য এবং ন্যায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাকওয়াই ছিল তাতে সম্মানের মানদণ্ড। তিনি ঘোষণা করেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের রব এক আল্লাহ, তাকওয়া ব্যতীত আনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই...। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে বেশি তাকওয়াবান।’ (বায়হাকি)

নারীর যথাযথ মূল্যায়ন : তখনকার আরবে নারীদের ভোগ্যসামগ্রী মনে করা হতো। তারা ছিল পুরুষদের দাসীমাত্র। কন্যাসন্তানদের জ্যান্ত দাফনপ্রথা বৈধ ছিল। পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোনো অংশ ছিল না। তিনি নারীদের পৃথিবীর সর্বোত্তম বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবী মানুষের ভোগ্য বস্তু, আর এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো পুণ্যবতী স্ত্রী।’ (নাসায়ি)

সংঘাতমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা : আরবের বিভিন্ন গোত্রে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই থাকত। সামান্য অজুহাতে ভয়াবহ যুদ্ধের দামামা বেজে উঠত। আর দাবানলের মতো জ্বলত কয়েক যুগ। রক্তপাত ও লুণ্ঠন ছিল তাদের নিত্যদিনের পেশা। প্রিয়নবী (সা.) এসবের অবসান ঘটিয়ে শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। নবুওয়াতের আগে ‘হিলফুল ফুজুল’ এবং পরে ‘মদিনা সনদ’-এর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।

মদপান ও জুয়ার নিষিদ্ধতা : মদপান হয়ে ওঠেছিল তদের আভিজাত্যের বৈশিষ্ট্য। মদপান করে নর্তকিদের সঙ্গে তারা জঘন্যতম অশ্লীল কাজ করত। অপরদিকে জুয়া খেলা ছিল তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। জুয়া খেলায় হেরে মানুষ অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতো। ফলে ব্যাহত হতো সামাজিক জীবন। মহানবী (সা.) মদ ও জুয়ার অবৈধতা সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য মদ ও জুয়া হারাম করেছেন...।’ (মুসনাদে আহমদ)

ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের শিক্ষা : প্রাচীন আরব ছিল নিষ্ঠুরতায় ভরপুর। ভোগবাদী আরবরা দাস-দাসী, এমনকি গোত্রের লোকদের সঙ্গে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করত। কেউ কারও কল্যাণের কথা ভাবত না। রাসুল (সা.) সমাজ থেকে এসব বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা দূর করে সমাজের আমূল পরিবর্তনের জন্য তাদের কোরআনের শিক্ষা দেন।

মদিনা সনদ : ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর রাসুল (সা.) মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। সেখানে বসবাসরত দুটি গোত্র আউস ও খাজরাজের মধ্যে গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ লেগেই থাকত। কলহে লিপ্ত সম্প্রদায় দুটির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন এবং মদিনায় বসবাসরত সব গোত্র ও শাখা গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রিয়নবী (সা.) যে ধারার সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন তা ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত। এটিই পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান।

জাকাতের বিধান প্রচলন : অর্থনৈতিক দৈন্যদশা দূর করে সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের সৌধ নির্মাণের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জাকাতের বিধান চালু করেন তিনি। যেন দারিদ্র্য বিমোচনের পথ সুগম হয় এবং ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য চিরতরে মুছে যায়।

জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা : সবার জীবন ও সম্পদ পবিত্র আমানত, তিনি এ বিশ্বাসের ওপর সমাজ কাঠামোকে গড়ে তোলেন এবং প্রতিটি মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের জান ও মাল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের সাক্ষাৎ দিবস পর্যন্ত এমন সম্মানিত যেমন সম্মান রয়েছে এ দিনের, এ মাসের এবং এ শহরের।

আমরা যদি বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি তাহলে আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবনের সর্বত্র রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। তবেই পুরো পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!