• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পদত্যাগ অস্ত্রে কতটা সফল হবে বিএনপি?


সোনালীনিউজ প্রতিবেদক   ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ০৪:১৪ পিএম
পদত্যাগ অস্ত্রে কতটা সফল হবে বিএনপি?

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। গতকাল রোববার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে গিয়ে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দেন দলের ৫ এমপি। 

তারা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা। বিদেশে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ এবং অসুস্থতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার সশরীরে উপস্থিত হননি। তাদের পক্ষে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তবে হারুন অর রশিদ ও আবদুস সাত্তার এমপি সশরীরে উপস্থিত না থাকায় তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি স্পিকার। 

সংবিধানের ৬৭ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ করতে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।’ এদিকে, গত সন্ধ্যায় পদত্যাগকারী ৫ এমপি আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। 

এর আগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির এমপিরা। তারা বলেন, সংসদে জনগণের পক্ষে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এজন্য সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করতেই একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে শনিবার বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগে দলের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপির দলীয় সাত এমপির পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দেন। গণসমাবেশে বিএনপির এমপিরা ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য দিয়ে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুন অর রশিদ অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় তিনি গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না।

বিএনপি এমপিদের এই পদত্যাগে সংসদে কোনো সংকট তৈরি হবে কিনা প্রশ্নে রুমিন বলেন, সংকট তৈরি হবে কী হবে না, সেটা তো আপনারা দেখবেন। সত্যিকারের বিরল বলতে যদি কিছু বোঝা যায় সেটা হচ্ছে বিএনপি। সেটা দেশের মানুষ যেমন জানে সরকারও খুব ভালো করে জানে। সংকট যে তৈরি হবে সেটা বোঝা যায়, যখন সরকার প্রথমেই বলে, সংকট তৈরি হবে না।

বিএনপির সংসদে আসার সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একদমই ভুল ছিল না। আমরা বলেছিলাম যে সীমিত সুযোগ আমরা পাব, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমরা করব, তিন সাড়ে তিন বছরে আপনারা দেখেছেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। সুযোগ পাইনি, সময় পাইনি, মাইক অফ করে দেয়া হয়েছে। তার মধ্য থেকেও যতটুকু সম্ভব আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে গেছি।

বিএনপির অপর এমপি জি এম সিরাজ বলেন, বিশাল জনসমাবেশে জনগণকে সাক্ষী রেখে আমরা পদত্যাগ করেছি। গতকাল ই-মেইলের মাধ্যমে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছি। 

পদত্যাগ করা ৬ এমপির ফ্ল্যাট-গাড়ির হিসাব চান ব্যারিস্টার সুমন

এদিকে পদত্যাগ করা বিএনপির ছয় নেতা রাষ্ট্রের কাছ থেকে ফ্ল্যাট-গাড়িসহ কী কী সুবিধা নিয়েছেন, তা জানতে চেয়ে আজ সোমবার আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

সংসদ সচিবালয়ের সচিব, অর্থসচিব, গণপূর্তসচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ছয়জনের কাছে সোমবার তিনি নোটিশ পাঠান।

এতে উল্লেখ করা হয়, তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পাঠানো নোটিশে বিএনপির সাবেক ছয় এমপি সংসদ সদস্য হিসেবে ফ্ল্যাট, গাড়িসহ রাষ্ট্রীয় কী কী সুবিধা নিয়েছেন, সে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘জনগণ তাদের পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। আর এই পাঁচ বছরে জনগণকে সেবা দেয়ার জন্যই তারা শপথ নিয়েছেন। অথচ পাঁচ বছর পূর্ণ না করে, জনগণকে সার্ভিস না দিয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা বেআইনি।’

শূন্য আসনের তফসিল হতে পারে বৃহস্পতিবার

আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার নিয়ম, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, তফসিল আমরা খুব তাড়াতাড়িই দেব, ইনশাআল্লাহ। যেহেতু ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আরেকজন নির্বাচন কমিশনার আজ ঢাকার বাইরে আছেন। আগামীকালও থাকবেন। পরশু হয়তো আসবেন। এরপর বৃহস্পতিবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে হয়তো আমরা বসব। মিনিমাম সময় যেটা দিতে হয় সেটি দিয়ে আমরা হয়তো তফসিল দিয়ে দেব। আমরা ৯০ দিন অপেক্ষা করবো না।

যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই এই নির্বাচনের জন্য ৯০ দিন অপেক্ষা করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব নির্বাচনই ৯০ দিনের মধ্যে করতে হয়। কিন্তু মিনিমাম একটা সময় দিতে হয় কারণ নমিনেশন জমা দেওয়ার সময় থাকে, বাছাইয়ের সময় থাকে, প্রত্যাহারের সময় থাকে, প্রচারণার সময় থাকে। এই সময়টা দিয়ে তারিখ ঘোষণা করা হবে। 

জাতীয় নির্বাচনের আগেই ছয়জন সংসদ সদস্যের পদত্যাগ বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে কি না? জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, না, আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। আমাদের হলো রেফারির কাজ। আমরা মাঠ প্রস্তুত রাখব, গ্যালারি প্রস্তুত রাখব। সবকিছু প্রস্তুত রাখব, প্লেয়াররা খেলতে আসবেন। 

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঠে আসার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব কিন্তু যারা এটি আয়োজন করে তাদের, মানে সরকার ও রাজনীতিবিদদের। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই।

খেলোয়াড়রা আসুক বা না আসুক আপনারা শুরুর মাঠ প্রস্তুত রাখবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খেলোয়াড়রা তো অবশ্যই আসবেন। সব খেলোয়াড় নাও আসতে পারেন। যাদের প্রস্তুতি থাকবে না তারা তো নাও আসতে পারেন। ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। সবগুলো দলই যে নির্বাচন করবে সেটি তো আর বলা যায় না। 

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপির ছয়জন বিজয়ী হন, পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবেন না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!