• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

তিন ইস্যুতে ফের বিতর্কে প্রশাসন


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ১২:৫০ পিএম
তিন ইস্যুতে ফের বিতর্কে প্রশাসন

ঢাকা : সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি আলোচিত ঘটনায় ফের বিতর্কে পড়েছে প্রশাসন। একজন ইমামের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আচরণ, সাবেক জেলা প্রশাসকের ভিডিও ফাঁস এবং জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে মূলত এ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ইতোমধ্যে সাবেক ডিসিকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে ইউএনওকেও। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো কর্মকর্তা অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দিচ্ছে না সরকার।

গোপন ভিডিও ফাঁস সাবেক ডিসির : গত ১৬ অক্টোবর বরগুনার সাবেক ডিসি হাবিবুর রহমানের একটি গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে সাবেক ডিসিকে এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দেখা যায়। এ ঘটনা বরগুনায় আলোচনার ঝড় তোলে। বিব্রত হয় প্রশাসন।

পরে গত ২২ ডিসেম্বর হাবিবুর রহমানকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। হাবিবুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে সংযুক্ত যুগ্ম সচিব ছিলেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরগুনায় জেলা প্রশাসক পদে যোগ দেন হাবিবুর রহমান। আড়াই বছর কর্মরত ছিলেন সেখানে। ২০২৩ সালের ৯ জুলাই তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়। পরে গত ৪ সেপ্টেম্বর উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হলে হাবিবুর রহমানও পদোন্নতি পান। তিনি জননিরাপত্তা বিভাগের আনসার ও সীমান্ত অনুবিভাগের সীমান্ত-১ শাখার যুগ্ম সচিব ছিলেন।

ইমামকে চাকরিচ্যুত করে সমালোচনায় ইউএনও : গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ১৩ অক্টোবর ইউএনও ফোরকান এলাহী বেলা সোয়া একটার দিকে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে আসেন। তখন খুতবা শেষ হয়। এরপর ইমাম তার পেছনে মুয়াজ্জিনের বদলে অন্য একজনকে (ইউএনও) দেখে তাকে একটু সরে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য বলেন। পরে নামাজ শেষে ইউএনও মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ইমামকে পুকুরের ঘাটলায় ডেকে নেন। এরপর ইউএনওকে চেনেন কি না জানতে চান। ইমাম আবুল বাশার ইউএনওকে চিনতে পারেননি জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে ইউএনও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং ইমামকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। ইমামকে পানিতে চুবাতেও চান।

এ সময় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহকে ডেকে আনেন ইউএনও। এরপর ইমামকে মসজিদের ইমামতি থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান মসজিদ কমিটিকে বলে তাকে নামাজ পড়াতে নিষেধ করেন।

দুদিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। পরে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান ইউএনও এবং ভাটরা কাছারী কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশারের মধ্যকার সমস্যা মিটমাট করে দেন। আবুল বাশারকে তার পদে বহাল করা হয়।

পরে গত ২২ অক্টোবর ইউএনও ফোরকান এলাহীকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলায় বদলি করা হয়।

মঞ্জুর আহমেদকে সরানো নিয়ে সমালোচনা : গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নদী রক্ষায় দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি। নদী দখলদারদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে- এমন আলোচিত বক্তব্য দেওয়ার ২৪ দিনের মধ্যে তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করে গত ১৮ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মনজুর আহমেদ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে যোগ দেন গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে তার তিন বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদী দখলদারদের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি আছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যারা বালি উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে।

২০ অক্টোবর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দায়িত্বপালনের মাঝপথে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দাবি করে, এই পদক্ষেপ নদী রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও তা এমনভাবে ব্যবহার করে সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে, সেটাই উদ্বেগের কারণ বলে মনে করে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, এতসব ‘নেই’-এর মধ্যে সম্প্রতি দেশবাসী কিছুটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল সদ্য সাবেক চেয়ারম্যানের সাহসী অবস্থানের কারণে। তিনি বলেন, ‘নদী কারা দখল করছে, ধ্বংস করছে, দুষণ করছে, সেটা অন্তত আমরা জানতে পারছিলাম। একটা জনমত তৈরি হওয়ার আবহ দেখা যাচ্ছিল, বেগবান হচ্ছিল নদী রক্ষার আন্দোলন।’

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!