• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা-মহকুমা-থানায় প্রতিরোধ কমিটি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১১, ২০১৮, ০২:২৫ পিএম
জেলা-মহকুমা-থানায় প্রতিরোধ কমিটি

ঢাকা : আজ ১১ মার্চ। একাত্তরের এই দিনেও স্বাধীনতার দাবিতে অবিচল ছিল সর্বস্তরের মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে তারা সব ধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখে। ভেঙে পড়ে প্রদেশের প্রশাসনিক কাঠামো।

অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শরিক হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করে। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, খাজনা-ট্যাক্স আদায় বন্ধ হয়ে যায়। সামরিক সরকারের আদেশ অমান্য করে আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এদিনও সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সরকারি এবং আধাসরকারি সব ভবন ও বাসগৃহে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে।

জাতিসংঘ মহাসচিব পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের সব কর্মচারীকে সদর দফতরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। একই দিনে তাজউদ্দীন আহমদ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা সংক্রান্ত আরো কিছু নির্দেশ জারি করেন। অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রত্যেক জেলা, মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগ্রাম-প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। প্রদেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

কবি আহসান হাবীব, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনসহ অনেকে পাকিস্তান সরকারের খেতাব বর্জন করেন। ছাত্র-যুবক সশস্ত্র প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি সৈন্য এবং আধাসামরিক বাহিনী তথা ইপিআর, পুলিশ, আনসারদের মধ্যেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইপিসিএস ও সিএসপি সমিতির বাঙালি সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আনুগত্য ঘোষণা করেন এবং প্রত্যেকের এক দিনের বেতন আওয়ামী লীগের তহবিলে দান করেন।

ওদিকে সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেওয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেওয়া হয়। যশোরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে সরকার এক নতুন সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেয় যে, ‘কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্র বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণে বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাÍক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।’

ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ব বাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগপ্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে উলফ এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।

টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান সাত কোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম বিরোধ থাকা উচিত নয়। জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি তারবার্তা পাঠান। তারবার্তায় ভুট্টো বলেন, ‘উদ্ভূত সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আমরা আজ বিরাট সঙ্কটের মুখোমুখি। দেশের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। এ ব্যাপারে আমাদের উভয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ধ্বংস এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমাদের করতে হবে। যেকোনো মূল্যের বিনিময়ে দেশকে রক্ষা করতে হবেই।’

করাচিতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘খুব দ্রুত পট পরিবর্তন হচ্ছে। দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে যথা শিগগির ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই কার্যত এখন ঢাকার সরকার। সেখানে সব সরকারি কর্মচারী এবং সচিবরা তাঁর নির্দেশ পালন করছেন। ঢাকায় কেবল সামরিক সদর দফতরে পাকিস্তানি পতাকা উড়ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দুই অংশকে এক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!