মৃত্যুর আগে যে শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন এরশাদ

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সাবেক রাষ্ট্রপতি, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দাফন দাফন সম্পন্ন। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজ বাসভবন রংপুরের পল্লী নিবাসে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

মঙ্গলবার ( ১৬ জুলাই) বিকেল ৫টা ৪৪ মিনিটে পল্লী নিবাসে এরশাদকে দাফন করা হয়েছে। সাবেক এ রাষ্ট্রপতিকে দাফন করার আগে বিকেল ৫টা ৪১ মিনিটে তার প্রতি শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এ সময় সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিল। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।এর আগে চার কিলোমিটার হেঁটে জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মরদেহ বহনকারী গাড়ি এরশাদের স্বপ্নের বাসভবন রংপুরের পল্লী নিবাসে নিয়ে যান দলীয় নেতাকর্মীরা। রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ তার মরদেহ বহনকারী গাড়ি নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় পল্লী নিবাসে পৌঁছান। সেখানে মরদেহ পৌঁছানোর পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

এরপর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মরদেহ দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগে এরশাদের দাফন করার স্থান নিয়ে নানামুখী বিতর্ক শুরু হয়। অবশেষে মঙ্গলবার রংপুরে এরশাদের চতুর্থ ও শেষ জানাজার পর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নিজ বাসভবন পল্লী নিবাসেই এরশাদকে দাফন করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

এর আগে জাতীয় পার্টির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রংপুরের মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রংপুরেই এইচএম এরশাদকে দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন বেগম রওশন এরশাদ। পাশে রওশন এরশাদের জন্য কবরের জায়গা রাখার অনুরোধও করেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, রোববার ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এরশাদ।

এদিকে, মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে পূর্বে নিজের শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সাবেক এই ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি। তবে কি ছিল তার সেই শেষ ইচ্ছা! মৃত্যুর আগে জাতীয় পার্টিকে আরেকবার ক্ষমতায় দেখার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

তিনি নেতাকর্মীদের কাছে বলেছিলেন, ‘পার্টিকে ক্ষমতায় দেখা আমার একমাত্র শেষ ইচ্ছা। তোমরা নেতাকর্মীরা আমার মৃত্যুর আগে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় এনে দিবা। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা। মৃত্যুর পূর্বে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধও রাখতে চেয়েছিলেন প্রয়াত এই দলীয় প্রধান। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে ক্ষমতায় বসে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চেয়েছিলেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।

সেদিন নির্বাচনি জনসভায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি জেলা, থানা ও ইউনিয়নে অতিদ্রুত সফল কমিটি ঘোষণা করতে হবে। তোমাদের (তৃণমূল) কাছে আমার একটাই চাওয়া- পার্টিকে ক্ষমতায় নাও। নিজেদের মধ্যে ঐক্য জোরালো করে মানুষের কাছে ছুটে যাও। আমাদের শাসন আমলের কথা সবার কাছে পৌঁছে দাও।’

তবে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি নিজের সেই শেষ স্বপ্নটা আর পূরণ করে যেতে পারলেন না । জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখার সেই স্বপ্নকে স্বপ্ন রেখেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন ৮০’র দশকের এই স্বৈরশাসক। 

গত রোববার সকাল পৌনে ৮টায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। এরপর রোববার বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় এবং বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরে চতুর্থ জানাজা শেষে আজ তাকে দাফন করা হবে। এরশাদের ভাই জিএম কাদের জানিয়েছেন, রংপুরে নয়, এরশাদের দাফন হবে ঢাকাতেই।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ