• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

রেগে গেলেন ড. কামাল, এক ধমকেই ঠাণ্ডা গণফোরাম


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০, ১০:৩৬ এএম
রেগে গেলেন ড. কামাল, এক ধমকেই ঠাণ্ডা গণফোরাম

ঢাকা: গণফোরামে বিগত কয়েক মাস ধরে চলমান পাল্টাপাল্টি শোকজ ও সাময়িক বহিষ্কার নিয়ে চটেছেন দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে প্রেসিডিয়ামের কয়েকজন সদস্য ও কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠকে তিনি কড়া নির্দেশ দেন, দলে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা না হয়। প্রেসিডিয়ামের অন্যতম একজন সদস্যকে সাংগঠনিক সহনশীলতা বজায় রাখতে ধমকের স্বরে নির্দেশ দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক কামাল হোসেন। গণফোরামের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

গণফোরামের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ও যুগ্ম সম্পাদক মুশতাক আহমদকে ‘সাময়িক বহিষ্কারের’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকালে দলের প্রেসিডিয়াম ও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বৈঠকে বসেন।

এদিন বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে মতিঝিলে দলের সভাপতি কামাল হোসেনের চেম্বারে বৈঠকটি শুরু হয়। এতে কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়ামের সদস্য শফিকুল্লাহ চৌধুরী, মোকাব্বির হোসেন এমপি, সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ ও যুগ্ম সম্পাদক মুশতাক আহমেদ ও মেজর (অব.) আমিন আহমেদ আফসারী উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে দলটিতে ১৩ জন নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নেতারা জানান, বৈঠকে কামাল হোসেন প্রেসিডিয়ামের একজন নেতাকে কড়া ভাষা বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় দেখছি নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। এতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়।’ ওই নেতা পরে বিষয়টিকে ‘কম্প্রোমাইজ’ করার কথা বলার পর রেগে যান কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, কীসের কম্প্রোমাইজ—দলের সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য? এগুলো তো ছাত্র রাজনীতির মতো করলে হবে না।

বৈঠকে কামাল হোসেন রেগেছেন, এমন প্রসঙ্গে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘তিনি তো আমাদের অভিভাবক। তিনি সে হিসেবে বকাঝকা করে ঠিক করে দেবেন, এটা তো এমন কোনও ব্যাপার না। তিনি অনেক বড়মাপের মানুষ। আমিও যদি ভুল করে থাকি, আমাকেও তো বকতে পারেন। এটা তিনি করতে পারেন।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি গণফোরামের প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাছিব চৌধুরীর স্বাক্ষরে একটি চিঠিতে সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ও যুগ্ম সম্পাদক মুশতাক আহমদকে সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে অস্থিরতা চলছিল গণফোরামে।

এর আগে, গত জানুয়ারির শেষ দিকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় নেতা লতিফুল বারী হামীম, অ্যাডভোকেট হেলাল ও খান সিদ্দিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। তারা শোকজের কোনও উত্তর দেননি। তবে নোটিশের জবাব দেওয়ার সময় এখনও বাকি আছে বলে জানান মহসিন রশিদ।

জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া দলের অস্থির পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরতে চাইলেও তাকে নেতারা নিষেধ করেছেন, তিনি যেন পারিবারিক অসুস্থতার বিষয়টি ঠিক করেই দেশে ফিরেন।

গণফোরামের নেতারা জানান, বৃহস্পতিবার কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর দলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। সুব্রত চৌধুরী বলেন, দলে এখন ঝামেলা নেই। তবে যেটুকু বাকি আছে, সেটা শেষ করা দরকার।

তিনি বলেন, ‘আমার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে কামাল হোসেন আমাদের সবার অভিভাবক, বলতে গেলে মা-বাবার মতো, তিনি বাবা-মার মতো ডেকে সমস্যা ঠিক করে দেবেন। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, আশা করি এগুলোর সমাধানও হয়ে যাবে।’

প্রসঙ্গত, গণফোরামে অভ্যন্তরীণ সংকট সৃষ্টি হয় ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল বিশেষ কাউন্সিলের পর। ওই কাউন্সিলে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও তার অনুগত কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারেননি। এই অংশের নেতাদের ভাষ্য- রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর কিছু নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কো-অপ্ট করেছেন, যাদের অনেকেই বিগত দিনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এতে দলের আদর্শিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও তারা মনে করেন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!