• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কানাডার আদালতে রায়: বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭, ০৯:৫০ এএম
কানাডার আদালতে রায়: বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন

ঢাকা: বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে কানাডার ফেডারেল কোর্ট। একজন বাংলাদেশি নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তকে বহাল রেখে বিচারক এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে কানাডাভিত্তিক অনলাইন সংবাদপত্র নতুন দেশ।

ফেডারেল কোর্টের বিচারক হেনরি এস ব্রাউন গত ২৫ জানুয়ারি এ রায় দেন। জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি, বিএনপির লাগাতার হরতাল এবং হরতালকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

নতুন দেশ পত্রিকার প্রতিবেদক শওকত আলী সাগর জানিয়েছেন, কানাডা সরকার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি বলে আবেদনকারীর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেও বলেন, তালিকাভুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এটি কানাডার গভর্নর কাউন্সল ঠিক করে। তার সাথে রাজনৈতিক ইস্যু জড়িত থাকে। আমি এই যুক্তি গ্রহণ করছি না। কানাডা তালিকাভুক্ত করেনি বলেই ইমিগ্রেশন অফিসার  বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা  করে ইমগ্রেশন অফিসার  সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না- এমন কোনো যুক্তিও এই মামলায় আসেনি।

খবরে বলা হয়েছে, মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার পরি তিনি ফেডারেল কোর্টে এ জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল জুয়েলকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু বিএনপির সদস্য হওয়ায় গত বছরের ১৬ মে তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বলা হয়, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, লিপ্ত  আছে বা লিপ্ত হবে’ এটি বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে  যুক্তি দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কানাডার ক্রিমিনাল কোডের ধারা তুলে ধরে বলেন, 'বিএনপির ডাকা হরতাল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিএনপি কর্মীদের হাতে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপির দাবি-দাওয়া সরকারকে মানতে বাধ্য করতে লাগাতার হরতালের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা প্রমাণ করে দলটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বাইরে চলে গেছে।'

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে আবেদনকারী কানাডায় প্রবেশাধিকার পাওয়ার অনুপযুক্ত। কেননা, এ দলটি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, আছে বা ভবিষ্যতে লিপ্ত হবে- এমনটি ভাববার যৌক্তিক কারণ আছে।’

জুডিশিয়াল রিভিউর নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারক হেনরি এস ব্রাউন  বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, আছে বা ভবিষ্যতে লিপ্ত হবে’ ইমিগ্রেশন অফিসারের এ ভাবনা যৌক্তিক কিনা তা পর্যালোচনা করতে এ জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করা হয়েছে। ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কার্যে লিপ্ত ছিল, আছে বা লিপ্ত হবে’ তা বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে বলে ইমিগ্রেশন অফিসার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। কানাডার আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে তার আলোকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তিনি এ উপসংহারে পৌঁছেছেন।

সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন অফিসারের সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে বিচারক বলেন, এই মামলায় রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে বিএনপির হরতাল ডাকাকে বিবেচনায় নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিসার। তিনি  সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই ধরনের হরতাল ডাকার পেছনে সুনির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য ছিল এবং তা হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এই হরতালে বিএনপিকর্মীদের দ্বারা অব্যাহত সন্ত্রাস সৃষ্টির ঘটনাও ঘটেছে। বিচারক বলেন, যে তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট অফিসার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই সব তথ্যপ্রমাণই এই বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করে।

বিচারক তার মন্তব্যে বলেন, বিএনপি নেতৃত্ব হরতালে সহিংসতাকে নিরুৎসাহিত করেছে তার সামান্যই প্রমাণ পাওয়া যায়। কখনো কখনো তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা  করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে সন্ত্রাসী কাজের জন্য সরাসরি তাদের দায়ী করার পরই তারা কোনো কোনো ঘটনার নিন্দা করেছে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে বিএনপি এখনো একটি বৈধ রাজনৈতিক দল। তারা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কাজের নির্দেশনা দিচ্ছে, সন্ত্রাসী কাজ করছে বা পরিকল্পিতভাবে  অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে- এমন একটি ভাবমূর্তি তাদের স্বার্থের অনুকূলে নয়। কিন্তু তাদের লাগাতার হরতাল এবং হরতালে অব্যাহত সহিংসতা আমাকে যৌক্তিকভাবেই বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে যে তারা তাদের কর্মীদের সহিংসতা থেকে নিবৃত করার উদ্যোগ না নিয়ে কৌশল হিসেবে হরতালে সহিংসতার নিন্দা করেছে। হরতালে সহিংসতাই এর সত্যতার প্রমাণ দেয়।

বিচারক বলেন, আবেদনকারীর বক্তব্য আমলে নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাও বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি ‘সহিংস বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উভয়েই জনগণ এবং সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সময় সহিংস কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কিন্তু দুটি রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক  অসদাচরণ বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা থেকে দায়মুক্তি দেয় বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, এ মামলায়ও ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা’ সেই প্রশ্ন বিবেচনায় এসেছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পর ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এটি বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি। ‘বিএনপি সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সন্ত্রাস বা সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে’  আদালত এ বক্তব্য বিবেচনায় নেননি।

সরকার পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারক বলেন,  সরকার পক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিয়েছেন যে, বিএনপি নেতারা   একবারই সন্ত্রাসের নিন্দা করেছে, যখন বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিএনপি তার কর্মীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নিন্দা করেছে তার কোনো প্রমাণ এই আদালতের সামনে নেই।

‘বাংলাদেশের সব সন্ত্রাসীই বড় দুটি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তারা হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি’ আবেদনকারীর এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা এ প্রশ্নে অফিসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা সেই প্রশ্ন বিবেচনার বিষয়টি আদালতের সামনে নেই।  

 ‘বাংলাদেশের সব সন্ত্রাসীই বড় দুটি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তারা হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি’ আবেদনকারীর এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কি না এ প্রশ্নে অফিসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন কি না সেই প্রশ্ন বিবেচনার বিষয়টি আদালতের সামনে নেই। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!