• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র: বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭, ০৯:০৪ পিএম
সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র: বিএনপি

ঢাকা: একজন বাংলাদেশী নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেয়ার সময় কানাডার ফেডারেল আদালত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কানাডার আদালত দ্বারা ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তকমা পাওয়ার পর বিএনপি বলেছে, তারা সন্ত্রাসী তো নয়ই, বরং বিএনপিই উল্টো সন্ত্রাসের শিকার। দলটির নেতাদের দাবি, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হলো ‘বিএনপি’ এবং এই দলটি কয়েকবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় ও বিরোধী দলে ছিল। তাই ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তকমার বিষয়টি বিএনপির বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একটি আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপি গণতন্ত্রকে গভীরভাবে ধারণ করে, লালন করে। বিএনপি সব সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়, বরং সন্ত্রাসের শিকার।’

কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে অভিহত করেছে বলে জানালে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কখন কোন আদালত কী বলেছে, আমার জানা নেই। সংবাদটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে কথা বলতে হবে। কোনো আদালতের সমালোচনা করতে পারব না। তবে স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, বিএনপি এদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সব সময় অবস্থান গ্রহণ করে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থেকেছে। এখনো অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

একই প্রসঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ বিষয়টি বিএনপির বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের অংশ বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। কারণ জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হলো বিএনপি। আমাদের দল কয়েকবার দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ও বিরোধী দলে ছিল। এমন রাজনৈতিক দলকে কেউ যদি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলতে চায়, তাহলে ধরে নেব বিএনপির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে চক্রান্ত করা হচ্ছে।’

এছাড়া কানাডার ফেডারেল আদালত আসলেই কি বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে অভিহত করেছে, এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

প্রসঙ্গত, বিএনপির সদস্য হওয়ার কারণে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেয়ার রায় বহাল রেখে দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলেও মন্তব্য করেন কানাডার ফেডারেল আদালতের বিচারক হেনরি এস ব্রাউন। বিএনপির লাগাতার হরতালের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা যে পর্যবেক্ষণ দেন, তাকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বিচারক ব্রাউন বলেন, কানাডার আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে, তার আলোকে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই ওই কর্মকর্তা উপসংহারে পৌঁছেছেন।

এদিকে এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘আমরা অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দিয়েছি। কাউকে কখনো গাড়ি পোড়াতে বলিনি, বোমা মারতে বলিনি। এসব জ্বালা-পোড়াও সরকারের লোকেরাও করতে পারে। সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও এজেন্সি বিএনপির জনপ্রিয় আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য এমন কিছু করতে পারে বলে আমরা বারবার অভিযোগ করে আসছি। ‘এসব জ্বালা-পোড়াও ঘটনার কোনো তদন্ত কি এখনো হয়েছে? হয়নি,’ মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ সরকারের আমলে তা হবেও না, কারণ তাদের লোকজনই জড়িত।’

এ পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলাকে হাস্যকর দাবি করে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘যদি কোনো আদালত এমন কিছু বলেন, তাহলে সমস্ত বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হবে।’

নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘জাসদ যে হোম মিনিস্টারের বাড়ি ঘেরাও করতে গিয়েছিল, তা কি কোনো গণতান্ত্রিক তৎপরতা? ভারতীয় হাই কমিশনারকে যে কিডন্যাপ করতে গিয়েছিল তা কি গণতান্ত্রিক তৎপরতা? আওয়ামী লীগ যে ঢাকার পল্টনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল, তা কি গণতান্ত্রিক তৎপরতা?’

ইতিহাস টেনে এনে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপি যখন ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করল তখন বিরোধীরা কী করেছিল? এমনকি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ কি তাণ্ডব চালিয়েছিল, মানুষ কি ভুলে গেছে? সেই হিসেবে তো আওয়ামী লীগও সন্ত্রাসী দল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সব দলই সন্ত্রাসী দল হয়ে যাবে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কাজেই আমি বলছি যে, কোনো দেশের আদালত যদি এ ধরনের কিছু বলে থাকে, তাহলে তার সমালোচনা করার সুযোগ নেই। তবে এটা বলতে পারি, আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ছিলাম, আছি। আমি দেখে আসছি বিএনপি একটি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল। কোনো সন্ত্রাসী আন্দোলনে নেই বিএনপি।’

উল্লেখ্য, মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার পর তিনি ফেডারেল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন করেছিলেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ মে তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই রায়ের বিপক্ষে আপিল করেছিলেন মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!