• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট আইনে পণ্যর দাম বাড়বে, হয়রানির শঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৯, ২০১৭, ০৮:৪০ পিএম
ভ্যাট আইনে পণ্যর দাম বাড়বে, হয়রানির শঙ্কা

ঢাকা: নতুন ভ্যাট আইনে অনেক কিছুই স্পষ্ট নয়। এতে হয়রানির করার সুযোগ রয়েছে। আগামী অর্থ-বছর থেকে ১৫ শতাংশ হারে সকল পণ্যে মূসক বা ভ্যাট যুক্ত হলে জিনিস-পত্রের দাম বাড়বে। বাড়ি নির্মাণে ব্যবহৃত রডসহ অনেক পণ্যর দামই বৃদ্ধি পাবে। কারণ ১৫ শতাংশ ভ্যাট একজন ক্রেতাকেই দিতে হয়। এখনো কিছু পণ্যে ভ্যাট নেই। নতুন আইনে সকল পণ্যে ভ্যাট যুক্ত হলে জিনিস-পত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে কতটা বাড়বে তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। 

ভ্যাট আইন কার্যকর, ১৫ শতাংশ মূসক, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ব্যবসার খরচ কমানো ও আগামী অর্থ-বছরের বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রির (ডিসিসিআই) নেতারা এভাবেই তাদের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে মতিঝিলে অবস্থিত সংগঠনটির কার্যালয়ে সামনের বাজেটে ডিসিসিআইয়ের বাজেট ভাবনা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সংগঠনটির নেতারা।

ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, এখনো অনেক পণ্যে ভ্যাট নেই। সেই সব পণ্যে ভ্যাট যুক্ত হলে দাম বাড়াতে বাধ্য হবে ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ায় চাহিদা কমবে, ফলে উৎপাদন কমে যাবে। অনেক ব্যবসায়ী উৎপাদন খরচ মিটিয়ে ব্যবসা করতে না পারলে কারখানা বন্ধ করে দিবে। এর ফলে ভ্যাটের নেতিবাচক প্রভাবে দেশের অর্থনীতির আকারও ছোট হয়ে আসবে।

এজন্য আমরা ভ্যাট ৭ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছি। আগামী বাজেট পাশের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, সরকার বাজেট বড় করলে, জনগণের কাছ থেকেই তো অর্থ সংগ্রহ করবে। তাই জনগণকেও দেখতে হবে। করের আওতা বাড়ালে ৭ শতাংশ ভ্যাট রেখেই রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব। এতে ব্যবসাও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। ব্যবসায়ীদের মতে ভ্যাট আইন-২০১২ পাশ হলে পণ্যের দাম বাড়বে, কিন্তু সরকার বলছে বাড়বে না। আসলে কেন বাড়বে না এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ধারনা দেয়া হয়নি। কোনো তথ্য আমাদেরকে দেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আগামী ১লা জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। এ বিষয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আইন সব সময় ভালো উদ্দেশ্যর জন্য করা হয়। কিন্তু আইনটি যারা প্রয়োগ করবে তারা কত ভালোভাবে প্রয়োগ করে তাও দেখতে হবে। নতুন আইনে কিছু বিষয়ে স্পষ্টতা নেই। একজন ব্যবসায়ীর টার্নওভার কত হয়েছে তা তিনি জানেন। এই অনুযায়ি ভ্যাট দিবেন। তবে, রাজস্ব কর্মকর্তা ব্যবসায়ীর কথা মানবেন কি-না সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। 

ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ব্যাংক লেনদেনের পাশাপাশি নগদ টাকায় লেনদেন হয়। অনেক ব্যবাসায়ীর হিসাব রাখা ও সংরক্ষণের জন্য দক্ষ ও শিক্ষিত হিসাবরক্ষক নেই। বেতন দিয়ে ওই ব্যবসায়ীর পক্ষে রাখাও সম্ভব নয়। এতে ব্যবসার খরচ বাড়বে। সেই ব্যবসায়ীর টার্নওভার কিভাবে নির্ণয় হবে। এখন সরকারি কর্মকর্তা যদি না মানেন, তাহলে ব্যবসায়ী যাবেন কোথায়, এতে হয়রানি বাড়বে। 

আইনে রাজস্ব কর্মকর্তাদের জুডিশিয়াল ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানীর শিকার হতে পারেন বলে শঙ্কা রয়েছে তাদের।

ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৩০ শতাংশের বেশি। প্রায় ৭৫ শতাংশ ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় এ খাত থেকে। বেসরকারি ৭৫ শতাংশ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এসএমইর সঙ্গে জড়িত। অথচ নতুন ভ্যাট আইনে খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘নো ভ্যাট’ এবং ৫০ লাখ থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য করা যেতে পারে।এছাড়া টার্নওভার ট্যাক্স লিমিট বর্তমান ৮০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন তিনি।

ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আয়কর সীমা বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, বর্তমানে মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ফলে করমুক্ত আয়ের সীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ভ্যাট আদায়ে প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং ও ভ্যাটকার্ড ব্যবহার করা যায় কি-না তা দেখতে হবে সরকারকে। অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে এ চেম্বার নেতা বলেন, সরকারকে বৈদেশিক বিনিয়োগ টানতে অবকাঠামো খাতকে নিয়ে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারিদের বুঝাতে হবে, এফডিআই দিয়ে শুধু অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। তাহলে এফডিআই আরো বেশি আসবে।

প্রতিটি দোকানে ইসিআর মেশিন বসানোর বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, প্রতিটি দোকানে ইসিআর মেশিন বসিয়ে ভ্যাট আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। দেশে প্রায় ৬০ লাখের মতো দোকান রয়েছে । সবগুলো দোকানে এই মেশিন বসানো এবং এটা পরিচালনার জন্য আলাদা লোক রাখা ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া অধিকাংশ দোকানেই এখন পর্যন্ত হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি নেই। 

আবুল কাশেম আরো বলেন, দেশে সবাই মোবাইল ফোন ব্যাবহার করেন। তাই মোবাইল ফ্যোনে অ্যাপস ব্যবহার করে ভ্যাট আদায় সিস্টেম চালু করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে নারী ও বয়স্ক (৬৫ বছর) করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আয়কর সীমা বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, বর্তমানে মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ফলে করমুক্ত আয়ের সীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এ সময় গ্যাসের নির্ভরতা কমাতে স্থানীয় কয়লা উত্তোলন করার পরামর্শ দেয়া হয় ডিসিসিআিইর পক্ষ থেকে।

বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে ভ্যাট আইন-২০১২ প্রণয়ন করা হয়। চলতি অর্থ-বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা থেকে সরে এসেছিল সরকার। সে সময়ে বলা হয়েছিল চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে আইনটি কার্যকর করা হবে। এখন পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে তার দৃঢ়তার কথাই বলছেন। 

নতুন আইনে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। যা সরাসরি গ্রাহক বা ভোক্তাকে বহন করতে হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!