• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাকরাইন উৎসবে ‘ভয়াবহতা’ বন্ধে পুলিশকে বাড়িওয়ালাদের চিঠি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১২, ২০২১, ০৬:১১ পিএম
সাকরাইন উৎসবে ‘ভয়াবহতা’ বন্ধে পুলিশকে বাড়িওয়ালাদের চিঠি

ফাইল ছবি

ঢাকা: সাকরাইন উৎসব, মূলত পৌষসংক্রান্তি, ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদযাপন, ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়।পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নিয়েছে। দিনটিতে ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ।তবে ইদানিং এ উৎসব বেশ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

এদিকে সাকরাইনে ডিজে পার্টি, আতশবাজি, আগুন নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলা, ফানুস ও মাদক নিষিদ্ধের কার্যকর নীতিমালা চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন পুরান ঢাকার ৮৩ ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা। 

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি কমিশনার বরাবর চিঠি দেন তারা।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ডিএসসিসি মেডিকেল রোড সাইড মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি মুহম্মদ কবির হুসাইন মনা, নাজিরাবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ আল রাশিদ, নাসির উদ্দিন সরদার লেনের ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম, চকবাজারের বেগমবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ কাউসার রহমান, সিদ্দিকবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ মোস্তাক, কাজী আলাউদ্দিন রোডের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান, হোসনী দালান এলাকার বাড়িওয়ালা মুহম্মদ হাসু, মিডিফোর্ড রোডের ব্যবসায়ী ফয়জুর রহমানসহ পুরান ঢাকার ৮৩ ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা।

চিঠিতে তারা বলেন, ‘আগামী ১৪-১৫ জানুয়ারি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সাকরাইন তথ্য ঘুড়ি উৎসব পালিত হতে যাচ্ছে। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ছাদে নানা আয়োজন হয়। এর মধ্যে রয়েছে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা, ডিজে পার্টি, আতশবাজি-ফানুস উড়ানো। এ বছরও একই ধরনের ও বড় পরিসরে এ উৎসব আয়োজন করা হবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

তারা বলেন, ‘মূলত সাকরাইন উৎসব আয়োজনে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। এ সময় শুধু পুরান ঢাকা নয়, ঢাকার অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও পুরান ঢাকার ছাদগুলোতে ভিড় জমান। অথচ করোনা মহামারিকালে যেকোনো ধরনের জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ বছর সাকরাইন উপলক্ষে হাজার হাজার ছাদে লাখ লাখ মানুষের ভিড় তথা জনসমাগম ঘটার সম্ভাবনা আছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনতে পারে।’

তারা আরও বলেন, সাকরাইনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি পোড়ানো হয়। অথচ ডিএমপির পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া ‘বিস্ফোরক আইন, ১৮৮৪’ অনুসারে রঙিন আতশবাজি রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বলার অপেক্ষা রাখে না, ফানুস ও আতশবাজি থেকে ভয়াবহ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সম্প্রতি থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ওড়ানো ফানুস থেকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ভবনটিতে প্রায় ৮০টির মতো পরিবার বসবাস করতো, অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। এছাড়া বিদ্যুতের তারে ফানুস আটকে থাকার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

চিঠিতে আবেদনকারীরা বলেন, পুরান ঢাকা জনবসতিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকা। ২০১৯ সালে চকবাজারের চূড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত এখনও শুকিয়ে যায়নি। ওই ঘটনার পর থেকে পুরান ঢাকায় বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের গোডাউনের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পুরান ঢাকায় দাহ্য পদার্থ নিয়ে যেখানে এত সতর্কতা, সেখানে আতশবাজির মতো বিস্ফোরক পদার্থ ফুটলে তা অবশ্যই ভয়ানক বটে। যদি আতশবাজি ও ফানুস থেকে পুরান ঢাকায় কোনো রকম অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তবে একদিকে যেমন সরু গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে না পেরে বিপুল জানমালের ক্ষতি হবে, অন্যদিকে পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়বে কালো ছায়া। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।

তারা বলেন, আতশবাজির পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান। আতশবাজির কারণে বায়ুতে বিষাক্ত কণা ছড়িয়ে পড়ে, যার কারণে পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। এছাড়া বিস্ফোরকের উচ্চ ও ভীতিকর শব্দে অসুস্থ রোগীদের হৃদযন্ত্রজনিত রোগ বৃদ্ধি পায়।

ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারা বলেন, সাইকরাইনকে কেন্দ্র করে মুখের মধ্যে কেরোসিন নিয়ে ‘আগুন খেলা’ নামে ভয়ঙ্কর খেলা প্রদর্শিত হয়, যা করতে গিয়ে অনেকের মুখ ঝলসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে অহরহ। এছাড়া ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পরে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এসময় ছাদগুলোতে বিকট শব্দে রাতভর গান বাজানো হয়, যা চারপাশের জনগণকে মারাত্মক বিরক্ত করে। অথচ এত উচ্চ শব্দে গান বাজানো ‘শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬’ অনুসারে অপরাধ।

চিঠিতে তারা আরও উল্লেখ করেন, সাকরাইন উৎসবের নামে চলে মদ-গাঁজা ও ইয়াবা সেবন ও ডিজে পার্টি। অথচ বাংলাদেশের আইনে জনসাধারণের জন্য মদ-গাজা-ইয়াবা’র মতো মাদকের সেবন ও কেনাবেচার ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। মূলত, মদ খাওয়া কিংবা ডিজে পার্টি নামে উচ্ছৃঙ্খলতা কখনই আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। এ ধরনের অনুষ্ঠানের কারণে আমরা আমাদের সন্তানদের ‘নৈতিকতা’ নিয়ে চিন্তিত। এসব অনুষ্ঠানে গিয়ে তারা আমাদের আদি সংষ্কৃতি থেকে সরে যাওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।

ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারা বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য ডিএমপি ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, যা অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু অনেক এলাকায় সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করতে দেখা যায়, যার কারণে মিডিয়াতেও শিরোনাম হয়।

চিঠিতে সাকরাইন উপলক্ষে ডিএমপির কাছে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারা দুটি দাবি করেন-অনলাইন বা মাঠপর্যায়ে (দোকানে) যারা আতশবাজি বা ফানুস ক্রয়-বিক্রয় করছে তাদের গ্রেফতার করা এবং আইনত শাস্তির মুখোমুখি করা। কোনও বাড়ির ছাদে কোনও আইন শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ (ফানুস ওড়ানো, আতশবাজি, ডিজে পার্টি, জনসমাগম, মদ-গাঁজা-ইয়াবা সেবন, আগুন খেলা, উচ্চস্বরে গান বাজানো ইত্যাদি) সংঘটিত হলে তার দায় ওই বাড়ির বাড়িওয়ালার এবং এর জন্য ওই বাড়িওয়ালাকেই আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে- এই মর্মে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।

সোনালীনিউজ/আইএ
 

Wordbridge School
Link copied!