• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

‘অতীত’ ভুলে যেতে চায় জামায়াত! 


মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর নভেম্বর ৯, ২০১৬, ০৫:৫২ পিএম
‘অতীত’ ভুলে যেতে চায় জামায়াত! 

ঢাকা: নাম আর লোগো পরিবর্তনের পর গঠনতন্ত্রে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণও করেছেন সংগঠনের তৃতীয় আমির মকবুল হোসেন। গত ১৭ অক্টোবর নির্বাচিত নতুন আমির হিসেবে শপথ নেয়ার পর দল ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেয়া তার বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে। বক্তব্যে সংগঠনের নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণের ইঙ্গিত দেয়ার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের পরামর্শও দিয়েছেন অতীত ভুলে যাওয়ার।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে অনেকের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার প্রসঙ্গেই এমন পরামর্শ দিয়েছেন নতুন আমির। একই সঙ্গে অতীতের কোনো রাজনৈতিক বিষয়কে অজুহাত না বানিয়ে সব দুঃখ, কষ্ট ও বেদনাকে ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন।

অতীত ভুলে নেতাকর্মীদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে নতুন আমির বলেছেন, ‘আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে জনগণকে আরো ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করে সংগঠনকে জনগণের দলে পরিণত করতে হবে। জাতীয় সংহতি ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার চেতনা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।’

জামায়াতকে অতীতের ‘কলঙ্ক’ থেকে ‘মুক্ত’ করতেই নতুন আমির এমন বার্তা দিচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে। সংগঠনের সংস্কার নিয়ে কিছুটা বিভক্তি থাকলেও নতুন প্রজন্ম ‘নির্দোষ জামায়াত’ দেখতে আগ্রহী।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন প্রায় ৯৯ ভাগই বয়সে তরুণ। বর্তমানে নেতৃত্বে আসা নতুন নেতাদের সবাই যুদ্ধাপরাধসহ বিতর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের দায় নিতে চাইছেন না। নতুনরা চান কলঙ্কিত জামায়াতের বদলে নতুন দলের নেতৃত্ব। এ নিয়ে দলের ভেতরে চলছে নানা টানাপোড়েন। 

মূলত, ‘কলঙ্কমুক্ত’ জামায়াত ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রশমনে ব্যস্ত এখন জামায়াত। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে নতুন আমিরের বক্তব্যে। 

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতা ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগে স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তখন দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে বাংলাদেশ ফিরে আসার অনুমতি পান।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের দাবির বিষয়টি ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে। পরে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করার পরপরই আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। পরের বছর ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস হয়। এরপর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও তাদের অপরাধের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয় ট্রাইব্যুনাল। 

এযাবৎ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ চার নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এছাড়া জামায়াতের আমির গোলাম আযাম সাজা ভোগের মধ্যেই মারা যান। ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের নেতারা হলেন- দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সর্বশেষ দলপ্রধান মতিউর রহমান নিজামী।

জামায়াতের সাবেক এক নেতার ছেলের মন্তব্য, দল হিসেবে জামায়াতের অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে। দল কী করবে? কোনো কর্মসূচি নিতে পারছে না। এককথায়, কিছুই করতে পারছে না জামায়াত। ফলে নতুন আমির মকবুল আহমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ।

জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘সংগঠনকে হ্যান্ডেল করাই মকবুল আহমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধিতার যে অভিযোগ উঠেছে, এটি সরকার কীভাবে নেয়, তা-ও দেখার বিষয়। তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে আছেন। তাকে ধরা হয় কি না। এর ওপর নির্ভর করছে তার সফলতা।’ 

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!