• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগের দাবি উন্নয়ন, বিএনপির গণতন্ত্র রক্ষা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৯, ২০১৬, ১২:৩৩ পিএম
আ.লীগের দাবি উন্নয়ন, বিএনপির গণতন্ত্র রক্ষা

একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে গণতন্ত্র রক্ষা-এ দুই ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বলছেন, উন্নয়নই প্রাধান্য পাবে। বিগত পাঁচ বছর সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নাসিকের উন্নয়ন করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকরা বলছেন, গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করায়, মানুষ ক্ষতাসীনদের ওপর নারাজ। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন পর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ‘সিল’ মারার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবে না। ফলে কোন দিকে রায় দেবে নারায়ণগঞ্জের পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার, তা নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই।

এদিকে নাসিকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা সমীকরণ। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এখনো জমে ওঠেনি। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর নির্বাচনী উৎসব শুরু হবে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গত রবিবার যাচাইবাছাই শেষে তাদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, বিগত পাঁচ বছর সিটি করপোরেশনে কাজ করেছি। কতটুকু করতে পেরেছি, তার মূল্যায়ন নগরবাসী করবে। আমি প্রতিটি মুহূর্ত চেষ্টা করেছি। গত পাঁচ বছরে ৬০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে উল্লেখ করে আইভী বলেন, উন্নয়নকাজের মধ্যে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে। বাকিটা সরকারসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া। বিগত দিনে যেসব উন্নয়নকাজ হয়েছে, তার সব হিসাব নগর ভবনে রয়েছে। যে কেউ চাইলে নগর ভবনে গিয়ে দেখতে পারেন। আমি আশাবাদী, মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দেবে।

তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, নাসিক নির্বাচন অবশ্যই জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। কারণ, নাসিকে দুটি প্রতীকে ভোট হচ্ছে। একটি হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার প্রতীক। আরেকটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের প্রতীক। নৌকা গণতন্ত্র হরণের প্রতীক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মানুষ এবার ‘ধানের শীষে’ ভোট দেবে। তা ছাড়া বিরোধী মতকে দমনের নামে ক্ষমতাসীন দলের হামলা, মামলা, জুলুম, নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ। তাই নারায়ণগঞ্জবাসী পরিবর্তন চায়।

এই যখন নাসিকের ভোটযুদ্ধে প্রার্থীদের নিজ নিজ অবস্থান, তখন স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পরই মূলত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। তবে প্রার্থীদের নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের কমতি নেই। সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ভালো কাজ করেছেন, তার একটা ইমেজ রয়েছে। এ ছাড়া দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচন করবেন। তাই ব্যক্তি ইমেজের পাশাপাশি তিনি দলীয় প্রতীককেও কাজে লাগাতে চান। সাখাওয়াত হোসেন খান বিএনপি মনোনীত ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ‘সাত খুন’ মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন। সেই সুযোগ নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর মন ‘জয়’ করতে চাইবেন। তবে সাখাওয়াতের মূল ভরসা হচ্ছে দলীয় প্রতীক ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্য ধরে রাখা। কেউ কেউ বলছেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আইভী-শামীম ‘নীরব দ্বন্দ্ব’ কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ব্যক্তি আইভী ‘জনপ্রিয়’।

কেউ আবার যুক্তি তুলে ধরেন, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে আইভীকে। ওসমান পরিবার ও আওয়ামী লীগের একাংশও তার বিরোধিতা করে। বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে ওই নির্বাচন দলমত-নির্বিশেষে আইভীর পক্ষে চলে যায়। ফলে এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে নাসিকের প্রথম নারী মেয়র হয়েছিলেন আইভী।

অন্যদিকে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবাদ ভুলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধভাবে আইভীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিলেও, এখনো মাঠে নামেনি শামীম ওসমানের অনুসারীরা। আইভী মনোনয়ন জমাদানের দিন জেলা সভাপতি আবদুল হাই, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। এদিকে সাখাওয়াত মনোনয়ন জামাদানের দিন জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

তবে প্রতীক বরাদ্দের পর আইভীর পক্ষে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, ‘আমার মাতৃতুল্য নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষেই কাজ করব। এখানে অন্য কোনো চিন্তা করার সুযোগ নেই।’

১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, ‘এখনো নির্বাচন জমে ওঠেনি। মার্কা বরাদ্দ দেয়ার পর হয়তো এই মরাভাব আর থাকবে না।’

২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে ব্যক্তিই বড়। দল কাকে মনোনয়ন দিল এটা মুখ্য বিষয় নয়। আইভী আপা আমাদের এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। এখানে দলীয় মনোনয়নের কারণে একটি বিভাজন তৈরি হবে। গত নির্বাচনের মতো এবার দলমত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ কম। তার পরও আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছি।’

সব মিলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন নারায়ণগঞ্জবাসী।

প্রসঙ্গত, নাসিকে দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন ৪ ডিসেম্বর। ৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ২২ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!