• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘আট ছেলেকে জবাই করেছে মিয়ানমার বাহিনী’


কক্সবাজার প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩, ২০১৬, ১০:৪০ এএম
‘আট ছেলেকে জবাই করেছে মিয়ানমার বাহিনী’

জাতি সংঘ বলেছে, বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত এক জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গারা। দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে বর্বরতার শিকার হয়ে দেশ ছাড়ছেন তারা। খুঁজছেন একটু নিরাপদ আশ্রয়। অবৈধভাবে ঢুকে পড়ছেন বাংলাদেশেও।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, রাখাইনের মংদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি বাড়ি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এইচআরডাব্লিউ'র এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডাম বলেছেন, স্যাটেলাইট চিত্রে ক্ষয়ক্ষতির যে বিবরণ পাওয়া গেছে বাস্তবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।

জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত এক জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গারা। দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে বর্বরতার শিকার হয়ে দেশ ছাড়ছেন তারা। খুঁজছেন একটু নিরাপদ আশ্রয়ের। অবৈধভাবে ঢুকে পড়ছেন বাংলাদেশেও।

তাদেরই একজন সুফিয়া বেগম। মিয়ানমারের পোহাখালী গ্রামে কাটিয়েছেন জীবনের ৮০টি বছর। তার ঘরে আট সন্তান। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার সেই আট সন্তানকেই হত্যা করেছে। তার চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। এই দুঃসহ স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি।

গত বৃহস্পতিবার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সুফিয়া বেগম জীবনের করুণ কাহিনী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গুলি মেরে যাচ্ছে। ঘরও পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার একটা ছেলেও আর নেই। মেরে ফেলেছে। কেন গুলি করল ওরা। গলায় ছুরি মারল?

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুফিয়া বেগম জানান, গত ৯ নভেম্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনী হঠাৎ হেলিকপ্টার দিয়ে পেট্রল ঢেলে গ্রামের সব ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে থাকে। আগের দিন গ্রামের স্কুলগুলোতে এসে অবস্থান নেয় সেনারা। এরপর আকাশ এবং স্থলপথে একযোগে অভিযান  শুরু করে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে গ্রামের পর গ্রাম। ভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। অন্য সবার মতো তিনিও পালানোর চেষ্টা করলে সেনারা তাকে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এরপর ঘর থেকে ছেলেদের ও পুত্রবধূকে ধরে নিয়ে ধান ক্ষেতে জড়ো করে সেনাবাহিনী। সবার সামনে পুত্রবধূকে ধর্ষণ করে সেনারা। পরে তার ছেলেদের চোখ বেঁধে জবাই করে হত্যা করে।

শুধু সুফিয়া বেগম নয়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত অনেক নারী বলতে থাকেন তাদের ওপর নির্যাতনের কাহিনী।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা নাফ নদীর দুই তীরেই চলছে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কান্না। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে নদীর দু’পাড়ের আকাশ-বাতাস। থামছে না তাদের কান্না। স্বদেশে অসহনীয় নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুহারা এ রোহিঙ্গারা এখন দিন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে। অবৈধভাবে প্রচুর রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে।

প্রথমদিকে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ করে। পরবর্তীতে সময়ে দেশের সর্বত্র থেকে অব্যাহতভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য দাবি ওঠলে সরকার তাদের প্রতি মানবিক হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!